যেভাবে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মাতুয়াইল

মাতুয়াইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ। ছবি: এমরান হোসেন

ঢাকার মাতুয়াইলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। রাস্তা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী সরিয়ে দিতে গেলে এই সংঘর্ষ হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রাবাড়ীর দানিয়া কলেজের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে মাতুয়াইলে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিশু মাতৃ ইনস্টিটিউটের সামনে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই এলাকার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়লে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এর পর থেমে থেমে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে।

সংঘর্ষের কারণে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করায় বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মহাসড়কটিতে যান চলাচলও বিঘ্নিত হয়।

এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা আবার সংগঠিত হয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় অন্তত একজন আহত হন ও বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।

মাতুয়াইলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিশা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ছবি: দীপন নন্দী/স্টার

দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা গলি থেকে বের হয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আবারও তাদের ধাওয়া দেন। কাঁদানে গ্যাস ও ইটপাটকেলের মুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা পিছু হটেন।

সংঘর্ষের সময় গুলিস্তানগামী স্বদেশ পরিবহনের একটি বাস, তুরাগ পরিবহনের একটি মিনিবাস ও তিশা ট্রাভেলসের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

তিশা বাসের চালক মো. সানাউল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, একটি মোটরসাইকেলে থাকা ৩ জন লোক তাকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। ওরা বলে, আপনি কি থেকে নামবেন, নাকি আপনাকেসহ আগুন দেব?

চালক সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচান।

এদিকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাতুয়াইলের প্রতিটি গলিতে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে র‌্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। র‌্যাব-১০-এর কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আইন লঙ্ঘন করে বিএনপির লোকজন অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় মহাসড়কে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। মহাসড়কে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।

মাতুয়াইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের সাঁজোয়া যানে হামলা চালানো হয়। ছবি: এমরান হোসেন

ওয়ারী বিভাগীয় পুলিশের উপ-কমিশনার জিয়াউল আহসান তালুকদারের দাবি, বিএনপির লোকজন অন্তত ৭টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে।

সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ পুলিশ সদস্য আহত এবং বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আটক হওয়ার কথাও বলেন তিনি। তবে তিনি আটককৃতদের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।

বিকেল সাড়ে ৩টার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাতুয়াইল এলাকা ছেড়ে যেতে দেখা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

4h ago