এটা শুধু পদযাত্রা নয়, মানুষের অধিকার আদায়ের পথে বিজয়ের জয়যাত্রা: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সরকারের পদত্যাগ দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচিকে 'শুধু পদযাত্রা নয়, জয়যাত্রা' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'এটা শুধু পদযাত্রা নয়, এটা জয়যাত্রা। মানুষের অধিকার আদায়ের পথে বিজয়ের জয়যাত্রা। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আজকে সারা বাংলাদেশে শুধু পদযাত্রা নয়, এর আগে সভা হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে, আমরা শান্তিপূর্ণনভাবে বিক্ষোভ করছি.. আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন।'

তিনি বলেন, 'পদত্যাগ করো, ওই পার্লামেন্ট যেটা বানাইছ, সেটা বিলুপ্ত করো এবং একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও।'

'আমরা ১২ জুলাই নয়াপল্টন থেকে যে দাবি দিয়েছি সারা দেশের মানুষের কাছে, শুধু আমরা বিএনপি নই, ৩৬টি রাজনৈতিক দল একযোগে ঘোষণা দিয়েছে যে, এই সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। এদেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আসুন এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করি। এটা হচ্ছে বিজয়ের যাত্রা। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় করব। এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করব।'

'এই রৌদ্র, বৃষ্টি, ঝড় সব কিছুকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদেরকে বিজয়ী হতে হবে। আমি সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবীসহ সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি এই দেশকে রক্ষা করতে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে আমাদের আজকে একজোট হতে হবে। এজন্য বলেছি সরকারকে পদত্যাগ করেন।'

সকাল ১১টার দিকে গাবতলী থেকে বিএনপির এই পদযাত্রা শুরু হয়। ১৬ কিলোমিটারের এই পদযাত্রা টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ গোল চত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁওয়ের তালতলা, বিজয় স্মরণী, কারওয়ান বাজার, এফডিসি, মগবাজার, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড়, দয়াগঞ্জ হয়ে রায়েসাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এই পদযাত্রা ঘিরে মহানগরীরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা সমবেত হয় বিভিন্ন স্পটে। ফলে পদযাত্রার বহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

নেতাকর্মীদের হাতে রয়েছে দলীয় ও জাতীয় পতাকা এবং সরকার পদত্যাগের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। লাল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি প্রভৃতি রঙের ক্যাপ পরে কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে আন্দোলনের দাবিগুলো জানান দিচ্ছেন।

উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'ঢাকার এই মার্চের মধ্য দিয়ে এই জনগণ এই বার্তা দিচ্ছে যে, সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।'

তিনি জানান, ঢাকা মহানগর ছাড়াও সারাদেশের সবগুলো মহানগর ও জেলা সদরে এই পদযাত্রার কর্মসূচি হচ্ছে।

পদযাত্রার সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'গতকাল ঢাকায় নির্বাচন কমিশন একটা উপনির্বাচনের তামাশা করেছে। সেই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল অত্যন্ত হেভিওয়েট প্রার্খী। সে আবার আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাঙ্কের প্রধান… দেশের সব মানুষ তাকে চিনে, প্রফেসর ড. আরাফাত। প্রতিদ্বন্দ্বী কে? হিরো আলম।'

'ওই নির্বাচনেও ভোটাদেরকে নিতেই পারে নাই। ভোটকেন্দ্র শূন্য, ভোটকেন্দ্র খালি। ইলেকশন কমিশন যেটা একেবারে পঙ্গু, অর্থব, বংশবদ, দাসানুদাস তাদের অধীনে মাত্র ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা তো দেখলাম কোথাও ভোটার নাই। পাঁচ ঘণ্টা পর একটা ভোটার আসছে, ওকে নিয়েই লাফালাফি-কাড়াকাড়ি। আবার ভোটের রেজাল্টের পর আরাফাত সাহেব আবার আঙ্গুল দেখায়—ভিক্টরি। লজ্জা, লজ্জা... হিরো আলম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, তার সঙ্গে করতে গিয়ে তাকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে পিটিয়ে পিটিয়ে সাপ যেভাবে মারে সেভাবে গতকাল তাকে মারা হয়েছে।'

পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'আবার পুলিশ বলে কী আমরা তো আমাদের কাজ করেছি। ঠিকই করেছেন। যে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী তাকে যখন মেরেছে, তখন আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। আর ইলেকশন কমিশন বলছে যে, না ওই ১১ শতাংশ ভোটের মধ্যে নাকি শ্রেষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে। এসব তামাশা করে কোনো লাভ নাই। এসব তামাশা করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোনো লাভ হবে না।

'২০১৪ সালে করেছ.. ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসেছ, ২১০৮ তে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করে নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে আবার ক্ষমতায় বসেছ। এই ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের পকেট খালি করে দিয়েছ। ট্যাক্স দিতে দিতে, সারচার্জ দিতে দিতে মানুষের এখন বেহাল অবস্থা। বিদুতের বিল দিতে দিতে…. চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম বাড়ছেই...'

বর্তমান সরকারকে অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার বলে উল্লেখ করে বিএনপি জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, 'অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার একটা। জনগণের টাকা লুট করে নিচ্ছে, যারা এলএনজির দাম বাড়ায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, লুটপাট করে টাকা বিদেশে নিয়ে যায়, সিঙ্গাপুর, কানাড়ায় বাড়ি বানায়… তাদের জন্য এই সরকার। শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) তাদের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা আলাপ করে।'

'লজ্জা হয়, দুঃখ হয়, ঘৃণা জানাই এই সরকারকে, ঘৃণা জানাই এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে, যে আজকে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে।'

ডেঙ্গুর পরিস্থিতি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ডেঙ্গুর কথা নাই বা বললাম। ডেঙ্গু হচ্ছে এখানে। আর আমাদের দক্ষিণের মেয়র অবকাশ যাপন করতে চলে গেছেন ইউরোপে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গেছেন আমেরিকায়। বাহ, কী রকম দায়বদ্ধতা।'

'আর কোনো দিন নয়। এখন আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকারকে পরাজিত করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

2h ago