আওয়ামী লীগ আবারো রাষ্ট্রে বিরাজনীতিকরণ চায়: ফখরুল
আওয়ামী লীগ আবারো রাষ্ট্রে বিরাজনীতিকরণ চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে 'সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখন তারা সব কাজ করছে—কীভাবে বিরোধী দলকে আটকে রাখা যায়। কীভবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বেআইনি ঘোষণা করা যায়; বেআইনি আইনের মধ্য দিয়ে। কীভাবে দেশে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করা যায় যাতে করে বিরোধী দল নির্বাচনে না আসতে পারে। এবার জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।'
'গত আগস্ট মাস থেকে আমাদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই আন্দোলনে ইতোমধ্যে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছেন। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। আজকে মানুষ বেরিয়ে আসছে। ভেলায় নদী পার করে তারা সমাবেশে প্রতিবাদ করতে যায়,' বলেন তিনি।
সময় বেশি নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, 'এনপিপি, জাতীয় পার্টি, জাগপা—গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে সরকারের বিরুদ্ধে তারা আজকে সবাই ঐক্যবদ্ধ একটি বিষয়ে, আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, এ দেশে আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই, নির্বাচন ছাড়া তো গণতন্ত্র টিকবে না কিন্তু সেই নির্বাচনটা অবশ্যই হতে হবে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে। সেটা হতে হবে এই সরকারকে পদত্যাগ করে। কারণ এরা অবৈধ সরকার।'
সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন আওয়ামী লীগের চেহারা বদলে যাচ্ছে। যার ভালো ঘর ছিল না তার এখন ৫ তলা বাড়ি। যারা সাইকেল চালাতো না তারা এখন গাড়ি চালায়, দামি দামি গাড়ি।'
গত ১ মাসে বিএনপি প্রায় ৮ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, 'এটা গণতন্ত্রের লক্ষণ! সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের লক্ষণ!'
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার প্রধান সব সময় একটি কথা বলছেন যে, "তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আমি বাতিল করিনি। আদালত বাতিল করেছেন। আদালতের রায়কে অস্বীকার করা কখনো সম্ভব নয়। আইনের শাসন মানতে আদালতের রায় মেনে চলতে হবে।" রায় পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়েছে, "সংসদ মনে করলে পরবর্তী ২ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসতে পারে। তবে বিচার বিভাগকে জড়িত করা যাবে না।" প্রকৃত ঘটনা হলো, প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত আদেশে ভবিষ্যতের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। কিন্তু ডকট্রিন অব নেসেসিটি ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন। এসব বিবেচনায় সংখ্যা গরিষ্ঠ বিচারকরা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেন।'
'প্রশ্ন হচ্ছে (দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন) এটা কেন করেছে তারা? এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৪টি নির্বাচন হয়েছে। কোনো নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ওঠেনি। জনগণ মেনে নিয়েছে।...২০০৮ সালে কারচুপির মধ্য দিয়ে যখন আওয়ামী লীগ সরকারে এলো, ২০১৪-এর নির্বাচনে আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো হলো। দেখা গেল, ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা লক্ষাধিক ভোটে জয় লাভ করেছে। তারা নিশ্চিত হয়ে গেল, যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সম্ভবনাই নেই!' বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'বিচারপতি খায়রুল হক ভিন্ন একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেন। এটা নিয়ে অ্যামিকাস কিউরি বলেছিলেন। ৯ জনের মধ্যে ১ জন বাদ দিয়ে সবাই কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে সংসদে একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে ১০৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামত নেওয়া হয়েছিল। তারা সবাই বলেছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা উচিত।'
'আওয়ামী লীগ অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে। তারা বলে, উল্টো আমাদের বলে আমরা নাকি মিথ্যা কথা বলি। একটি কথা আমাদের মিথ্যা প্রমাণ করে দিন!' যোগ করেন তিনি।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ফখরুল বলেন, 'আমরা খবর পাচ্ছি তারা বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া জন্য তারা আবার পুরোনো চক্রান্তে মেতেছে। তারা আবারো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় থেকে তারা চিঠি দিচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় যেসব মামলা করা হয়েছে ২০১৩ সালে সেগুলো দ্রুত ২ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। চার্জশিট দিয়ে শেষ করতে হবে আর আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিচারকদের বলা হচ্ছে, ২ মাসের মধ্যে সব রায় দিয়ে দিতে হবে।'
'এটা প্রমাণ করে তাদের পরিষ্কার লক্ষ্য তারা আবারো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে পুরোপুরি বিরাজনীতিকরণ করবে। নির্বাচন করবে বিরোধী দল ছাড়াই এবং বিরোধী দলের নেতারা যেন কেউ নির্বাচন করতে না পারে। এ রকম একটি ব্যবস্থায় কি বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যেতে পারে? তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে না। আমরা তো কাউকে লিজ দিয়ে দেইনি বাংলাদেশ,' বলেন তিনি।
Comments