সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘দড়ি ধরে টান মারার’ আহ্বান মির্জা ফখরুলের

সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘দড়ি ধরে টান মারার’ জন্য জনগণকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল
সোমবার বিকেলে বগুড়ায় বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে 'দড়ি ধরে টান মারার' জন্য জনগণকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার বিকেলে বগুড়ায় বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সরকার এ বছরের জন্য বাজেট দিয়েছে। তাদের দলের লোকেরা বলছে যে এই বাজেট হচ্ছে শুধু বড়লোককে বড় করার জন্য। জাতীয় পার্টির তাদের সঙ্গে ছিল। তাদের নেতা জিএম কাদের বলেছেন যে দেশ এখন খাদের কিনারে চলে গেছে। আরেকটু ধাক্কা দিলে দেশ শেষ হয়ে যাবে।'

সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে সিনেমার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, 'প্রতাপশালী এই আওয়ামী লীগ সরকারের মতো হীরক রাজা ইচ্ছামতো দেশ চালাত, যেমন খুশি তেমন। শেষে মানুষ বিদ্রোহ করলো। বিদ্রোহ করে মানুষ রাজার একটা স্ট্যাচু বানিয়েছিল। স্ট্যাচুতে একটা দড়ি লাগিয়ে মানুষ বলল, দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান। আজ এই দড়ি ধরে টান মারতে হবে। আর রাজাকে খানখান করতে হবে।'   

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সরকার এমন খেয়েছে যে আকাঙ্ক্ষা, লোভ শেষ হয় না। মুনতাসীর মামুনের একটা নাটক ছিল যার একটি চরিত্র ছিল তার শুধু ক্ষুধা লাগে। সব খেয়ে ফেলে, যা পায় তাই খায়। শেষে কাগজ খাওয়া শুরু করল, টেবিল-চেয়ার সব খাওয়া শুরু করল।'

'এই সরকারের অবস্থা হয়েছে এরকম। এখন তারা পুরো দেশটা খেয়ে ফেলেছে,' বলেন তিনি।

'সরকার এখন আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছে' মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেন কারও ভয়ে নাকি তিনি ভীত নন। ভীত যদি না হবেন তাহলে বিদেশ থেকে ফিরে এসে এ কথা বললেন কেন যে আমাকে তারা সরায় দিতে চায়। কারা সরাতে চায়? কেন সরাতে চায়? আপনি ভয় পান না। আবার বলেন, অনেক শক্তিশালী সেই দেশ…দুই মিনিটে শেষ করে দিতে পারে।'

বগুড়ার সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত বিএনপির তারুণ্য সমাবেশ। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

'আবার তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, ভিসানীতিতে তারা ভয় পান না, তারা নাকি নতুন ভিসানীতি তৈরি করবেন। এখন জনগণ কী বলবে? জনগণ হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না…তাদের কথা শুনলে ঘোড়াও হাসে,' বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, 'এরা অগোছালো হয়ে গেছে। প্রতিদিন এরা কী বলছে নিজেরাই জানে না। পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা বাংলাদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে হারানো অধিকার ভোটের অধিকার ফেরত পেতে চাই। আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চাই, আমরা এই লুট বন্ধ করতে চাই, আমরা মানুষের অধিকার ফেরত পেতে চাই।'

তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা এই সরকার ১২ বছরেও আদায় করতে পারেনি উল্লেখ করে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আপনি কী করেছেন। অনেক কথা বলেন, এই বাংলাদেশের জন্য যা করেছেন তা নাকি কেউ কোনোদিন করেনি। অথচ এই রংপুরের মানুষ বিশেষ করে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুরের মানুষের জন্য যা প্রয়োজন, সেই তিস্তার পানি আজ ভারত সব গেট খুলে দেওয়ায় অনেক অঞ্চল ডুবে গেছে। আবার বন্যা হবে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনই তো আপনি করতে পারেননি। আজকে ১০-১২ বছর হয়ে গেলো তিস্তা চুক্তি করতে পারেননি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারেননি, বিভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা আনতে পারেননি'  

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বগুড়ার সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত এই তারুণ্য সমাবেশে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। 

সমাবেশে আসার পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই সরকার এত ভীতু, এত কাপুরুষ যে গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছে। গাড়ি-ঘোড়া চলতে দিলে বগুড়া শহরে জায়গা দিতে পারবে না, এ কারণে বন্ধ করে দিয়েছে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সরকার ঋণের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। সবই কর্জ-ধার। লম্বা লম্বা মেগা প্রজেক্ট করছে, সেই প্রজেক্টে যা খরচ হয় সেটা ৩-৪ গুণ টাকা আবার আমাদের পকেট থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে।'

'প্রতিদিন পকেট কাটছে। এখন এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে যে, বিদ্যুৎ থাকে না। কিছুক্ষণ আগে এই সমাবেশের মাইক বিদ্যুতের না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গেল। গেল কোথায়? এরা ওই টাকা খেয়ে ফেলেছে। এদের লোভ শেষ হয় না,' যোগ করেন তিনি।

যুবকদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজ সময় আপনাদের, সময় হচ্ছে তরুণদের। এখন যুদ্ধে যাওয়ার সময় যুবকদের। এই তরুণরা সমাজ পাল্টিয়ে, তাদের অধিকার আদায় করেছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করে ভাষার অধিকার নিয়ে এসেছে। ৭১ সালে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। ৯০ সালে আন্দোলন করে তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে।'

'আজ তরুণ সমাজের ওপর দায়িত্ব এসেছে এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করার, তাদের অধিকার রক্ষা করার, ভোটের অধিকার রক্ষা করার। চাকরি পাওয়ার অধিকার রক্ষা করার, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রক্ষা করার, শিক্ষার অধিকার রক্ষা করার, মোটা ভাত, মোটা কাপড় পাওয়ার অধিকার রক্ষা করার। আজ সেই লক্ষ্যে আমরা লড়াই করছি। এই লড়াই বিএনপির লড়াই নয়, এই লড়াই জনগণের লড়াই। এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারুণ্যের প্রতীক তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, আমাদের দাবি একটাই আমাদের ভোটাধিকার ফেরত দিতে হবে, পদত্যাগ কর, সংসদ বিলুপ্ত কর এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দাও,' বলেন তিনি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে ও যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

11h ago