গাজীপুরে নৌকার পরাজয়

ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় ধাক্কা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জায়েদা খাতুন, জাহাঙ্গীর আলম, আজমত উল্লা খান,

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। তিনি এই সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। তবে, ৬২ বছর বয়সী জায়েদা খাতুনের কোনো রাজনৈতিক পটভূমি ছিল না। তাই তার কাছে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের পরাজয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এই ধাক্কা ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল পর্যায়েও ফাটলের বার্তা দিয়েছে।

গাজীপুরে বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের এই বিজয়কে আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতাকে হতবাক করেছে। কারণ, আজমতের বিজয় নিশ্চিত করতে দলটি তার সব ধরনের শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, একটি শহরের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কীভাবে পরাজয় ডেকে আনতে পারে তার বড় প্রমাণ গাজীপুর সিটি নির্বাচন। অথচ, গাজীপুর বরাবরই আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত।

তারা আরও মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে দলীয় আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় নিতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার আগে এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

জাতীয় নির্বাচনের মাত্র সাত মাস আগে ফরিদপুর ও কিশোরগঞ্জের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত গাজীপুরে এমন পরাজয় দলটির জনপ্রিয়তার অবস্থাও তুলে ধরেছে।

কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল সমাধানের মাধ্যমে সংগঠনের দিকে মনোনিবেশ ও দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে।

দলটির একাধিক নেতার অভিযোগ, গাজীপুরে নির্বাচনী প্রচারণা সমন্বয়ের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ২৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কমিটির সদস্যরা ঠিক মতো কাজ করেননি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে পারদর্শী উল্লেখ করে তারা বলেন, অন্য কোনো রাজনৈতিক দল সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কাছাকাছিও নেই।

কিন্তু, গত ১৪ বছরের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।

এ কারণে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতারা জয়কে হালকাভাবে নিয়েছিলেন এবং খুব বেশি চেষ্টা করেননি।

গত বছরের অক্টোবরে সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান। তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, 'অনেক কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব পালনের সময় নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন না।'

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফল হলো দলের অত্যধিক আত্মবিশ্বাসের উপযুক্ত জবাব। তারা ধরে নিয়েছিল এখানে জয় সহজ হবে এবং তারা জনগণের সরকারবিরোধী ও আওয়ামীবিরোধী মনোভাব মাথায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের প্রায় প্রতিটি জেলা কমিটিতে বিরোধ ও কোন্দল আছে।'

যাইহোক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'গাজীপুরের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।'

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, 'সরকার যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে তা প্রমাণিত হয়েছে।'

দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সরকার পরিচালনায় এতটাই ব্যস্ত ছিল যে, সংগঠন সেভাবে অগ্রাধিকার পায়নি।

২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ধাক্কা খেয়েছিল। সেবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও স্থানীয় অসন্তুষ্ট নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

কিন্তু, তারপরও দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রথম যে ভুলটি করেছেন তা হলো, তারা ভেবেছিলেন স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে সমর্থন করবে।

এছাড়া, তারা জাহাঙ্গীর ও তার মাকে খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। তারা ভেবেছিলেন, জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের পর স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না। তারা ধরেই নিয়েছিলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

কিন্তু, বাস্তবতা হলো- তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা গোপনে জায়েদা খাতুনের পক্ষে কাজ করেছেন।

গাজীপুর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছেন, বিএনপি সমর্থকদের কেউ কেউ জায়েদাকে ভোট দিয়েছেন। আবার অনেকে সরকারবিরোধী মনোভাব থেকে জায়েদাকে ভোট দিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র পদে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়ার পর জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে নিজের ও মায়ের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু, নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে। পরে তিনি তার মায়ের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন।

এর আগে, ২০১৩ সালে জাহাঙ্গীর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করলেও আওয়ামী লীগ আজমতকে বেছে নেয়। সেই নির্বাচনে আজমত বিএনপির এম এ মান্নানের কাছে পরাজিত হন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh economic growth

GDP growth overstated since 1995

Bangladesh’s economic growth has been overstated since 1995 and the practice of making inflated estimates rose after the fiscal year 2012-13, according to the findings of the white paper panel..It said Bangladesh was seen as one of the fastest-growing economies but its growth became a “par

4h ago