এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে জেলা আ. লীগের ২ নেতাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ
নাটোরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান ও সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মোর্তুজা আলী বাবলুকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ বুধবার দুপুরে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মিলনায়তনে সদর উপজেলা ও পৌরসভার কমিটির সভায় প্রবেশের সময় পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের লাঞ্ছিত করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, সভায় প্রবেশের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানকে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল হুমকি দেন এবং এর প্রতিবাদ করলে এমপি শিমুলের অনুসারী কোয়েল সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মোর্তুজা আলী বাবলুকে লাঞ্ছিত করেন।
এ ঘটনার দুটি ভিডিও দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এসেছে।
প্রথম ভিডিওতে দেখা যায়, এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল আঙুল উঁচিয়ে শরিফুল ইসলাম রমজানকে হুমকি দিচ্ছেন।
অপর ভিডিওতে দেখা যায়, এমপি শিমুলের অনুসারী রাশিদুল ইসলাম কোয়েল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মোর্তুজা আলী বাবলুর কলার ধরে টানাটানি করছেন।
মোর্তুজা আলী বাবলু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ দুপুরে পৌর ও সদর উপজেলা কমিটির সভায় শরিফুল ইসলাম রমজানকে ঢুকতে বাধা দেয় এমপি শিমুল ও তার সমর্থকরা। রমজান সভাস্থলে প্রবেশের চেষ্টা করলে এমপি শিমুল তাকে ধাক্কা দেন। এর প্রতিবাদ করায় এমপির ক্যাডার কোয়েলসহ কয়েকজন আমাকে লাঞ্ছিত করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'রাশিদুল ইসলাম কোয়েল কিছুদিন আগেও বিএনপির ক্যাডার ছিল। তাকে দলে নিয়ে এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের লাঞ্ছিত করাচ্ছেন। আমরা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এসব বিষয় জানাবো।'
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাটোর সদর উপজেলা ও পৌরসভা কমিটির মিটিংয়ে ঢুকতে গেলে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সমর্থকরা পুলিশের উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মোর্তুজা আলী বাবলুকে লাঞ্ছিত করে। এর আগে আমাকে এমপি শিমুল ধাক্কা দিলে, আমিও তাকে ধাক্কা দেই।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর ও উপজেলার কার্যনির্বাহী কমিটির বাইরের লোকদের নিয়ে সভায় ঢুকতে চান। তখন নেতাকর্মীরা তাকে বাধা দেয়।'
তবে কাউকে লাঞ্ছিত করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, 'নাটোর সদর উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি মনগড়া, অবৈধভাবে করা হয়েছে। এতে নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কাউকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেনি। সভার আগে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হলে আমি নিজে থামিয়ে দিয়েছি।'
জানতে চাইলে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৌর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সবসময় সতর্ক ছিল।'
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন।
২০২২ সালে নাটোর পৌরসভার এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয় জেলা আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে। তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল সেদিনই কমিটির তালিকায় সই করেন। কিন্তু সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস পরে সই করবেন বলে চলে যান।
পরে শরিফুল ইসলাম রমজান সাধারণ সম্পাদক এবং নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস সভাপতি নির্বাচিত হলে, এমপি শিমুলের বেশ কয়েকজন সমর্থকের নাম বাদ দিয়ে পৌর ও সদর উপজেলা কমিটি অনুমোদন করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। কমিটি থেকে নাম বাদ দেওয়া নিয়েই প্রথমে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমজান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কমিটির অনুমোদন বিষয়ে জবাব দিতে পারবেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। আমি কমিটি অনুমোদন বা কারও নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না।'
Comments