ব্যাংক ডাকাত-পাচারকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে কৃষককে জেলে পুরছে সরকার: বাম জোট

রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, রাতের ভোটে কারসাজি করে ক্ষমতায় থাকার কারণে জনগণের প্রতি কোনো অঙ্গীকার নেই সরকারের। তাই তারা ব্যাংক ডাকাত ও টাকা পাচারকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে গরিব কৃষককে সামান্য টাকার জন্য জেলে পুরছে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, 'ব্যাংক ডাকাতি ও ঋণ খেলাপি-কর ফাঁকির ঘটনা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পর্যন্ত মুখ খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ১ লাখ ডলারের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি মাত্র ২০ হাজার ডলারে আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েস (আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেখানো) হয়েছে।'

টাকা পাচারকারী ও ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান রুহিন হোসেন প্রিন্স।

তিনি বলেন, 'দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, সংবাদমাধ্যমকে ভীতির ভেতর কাজ করতে হচ্ছে। সব তথ্য আমরা জানছি না, কিন্তু যতটুকু জানছি, ব্যাংকগুলো ফোকলা হয়ে গেছে। সরকারের কাছের লোকজন প্রভাব খাটিয়ে এক একটি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচার করে দিয়েছে। অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। জননিরাপত্তা নেই, দ্রব্যমূল্য মানুষের জীবনে দুর্বিসহ পরিস্থিতি তৈরি করছে। সবক্ষেত্রে ব্যর্থ সরকার কারসাজি করে আবার ক্ষমতায় বসার ছক কষছে।'

'দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে মানুষ ভোট দিতে পারবে না। আমরা সেই কারণে তদারকি সরকার চাই। সংসদ বহাল থাকলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে না, টাকার খেলা, পেশিশক্তি, কারসাজি,  নির্বাচনী প্রচারে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ না হলে ভোটের পরিবেশ থাকবে না', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'সরকার মানুষের কাছে দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতি রাখেনি। পাহাড়ের জনগণের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। আমরা এই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করছি।'

তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা, সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, রেশনিং ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সারাদেশে কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, সারের দাম কমানোর দাবিতে বাম জোট এই সমাবেশ আয়োজন করে।

বাম জোটের ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক সিপিবি নেতা ডা.সাজেদুল হক রুবেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স ছাড়াও বক্তব্য দেন বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন, কমিউনিস্ট লীগের নজরুল ইসলাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী) নেতা ডা. জয়দীপ ডট্টাচার্জ, বিপ্লবী গনতান্ত্রিক পার্টির নেতা শহিদুল ইসলাম সবুজ, সিপিবি নেতা জলি তালুকদার, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা মোদাচ্ছের হোসেন বাবুল।

এ সময় সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশারফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, 'সরকার গরিবের পেটে লাথি মারছে। কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না, বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। আবার সামান্য টাকার জন্য তাকে জেলে নেওয়া হচ্ছে। সরকারের লুটপাটের কারণে বিদ্যুৎ খাতে বিপর্যয় হলেও তার দায় চাপানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপরে। গণশুনানি ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।'

তারা আরও বলেন, 'বামপন্থীদের  লড়াই ভোটাধিকারের জন্য, ভাতের জন্য, মজুরির জন্য, মর্যাদার জন্য। আমরা লড়াই করে গ্যাস রপ্তানি ঠেকিয়েছি, বন্দর ইজারা দিতে দিইনি, কয়লা বিক্রি করতে দিইনি। আমরা গণতান্ত্রিক শাসনের দাবিতে রাস্তায় আছি, শোষণ- বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আছি। ভোটের অধিকার- দ্বিদলীয় মেরুর বাইরে বিকল্প গড়ার সংগ্রামে আমরা থাকব।'

সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল পল্টন বিজয় নগর, শান্তিনগর মালিবাগ হয়ে মৌচাকে গিয়ে শেষ হয়। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত মানুষ লাল পতাকা হাতে মিছিলে যোগ দেন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

4h ago