চট্টগ্রামে আ. লীগের সমাবেশ: দলীয় কোন্দল নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় নেতারা

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মহানগরীতে আওয়ামী লীগের যৌথ প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে আগামী ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

এখনো প্রায় ১ মাস বাকি থাকলেও সমাবেশ সফল করতে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

তবে চট্টগ্রামে দলীয় কোন্দল এ সমাবেশের প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে সমাবেশ নিয়ে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ১২ অক্টোবর একই স্থানে বিএনপির সমাবেশের চেয়ে ১০ গুণ বেশি লোক জমায়েত করবেন তারা ৪ ডিসেম্বরের সমাবেশে। 

গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে কাদের বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন যে তারা ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করবেন। 

তার দাবি, বিএনপি পলোগ্রাউন্ডে ১২ অক্টোবরের সমাবেশে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ হাজার লোক জমায়েত করেছে। 

৪ ডিসেম্বরের জনসভাকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামের অন্যান্য বেশ কিছু সাংগঠনিক কর্মসূচি পুনর্নির্ধারণ করেছে। 

ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ইউনিটের কাউন্সিলের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেছে যা ১ ও ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন ১ ডিসেম্বর এবং চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন ৪ ডিসেম্বর।

গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে চট্টগ্রামে ৪ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। 

সমাবেশের সিদ্ধান্তের পর গত ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা জরুরি বৈঠকে বসেন। 

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পলোগ্রাউন্ডের জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে সর্ববৃহৎ জনসভায় পরিণত করা হবে। এ লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি।'

আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্ব

৪ ডিসেম্বরের জনসভাকে সফল করতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হলেও চট্টগ্রামে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এই প্রচেষ্টায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে। 

এই দ্বন্দ্বের কারণে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

মহানগর আওয়ামী লীগ প্রধানত দুটি উপদলে বিভক্ত। একটি আওয়ামী নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং অন্যটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।  

কোন্দলের কারণে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।

গত ২৪ অক্টোবর নগরীর নন্দন কানন এলাকায় ওমর গণি এম ই এস কলেজের প্রয়াত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতা নুর আহমেদের একটি স্মরণসভা প্রতিপক্ষের হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। 

এনায়েত বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আয়োজনে ওই সভায় আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। 

আয়োজকরা অভিযোগ করেন, নওফেলের অনুসারী এক যুবলীগ নেতার অনুসারীরা সমাবেশ বানচাল করতে আয়োজক নেতাকর্মীদের মারধর করে। অবশ্য সে সময় নাসির সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।  

এ হামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. ইদ্রিস আহত হন। নাসিরকে প্রধান অতিথি করায় এ হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন ইদ্রিস।

এরপর গত বুধবার নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে ৪ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নন্দন কাননের ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত আখ্যা দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, '৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতে নগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। সমাবেশ সফল করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং এজন্য একসঙ্গে কাজ করছি।'

যোগাযোগ করা হলে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা সত্য যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশের প্রস্তুতিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।'

তিনি বলেন, 'আমি চট্টগ্রাম নগর নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার  বৈঠক করেছি। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, তাই নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে আমার মনে হয় সমাবেশের প্রস্তুতিতে এটা কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না।'

Comments