‘সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না’

নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উন্মুক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নেতাকর্মীদের 'আরও ত্যাগ' স্বীকারের প্রস্তুতি নিতে বললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক উন্মুক্ত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের এক দফা এক দাবি সরকারের পদত্যাগ, দফা এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন হবে।'

'আমরা ইতোমধ্যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আমাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন। আমাদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে', যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমি বলতে চাই, গণতন্ত্রকে পেতে হলে, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারগুলো ফিরে পেতে হলে, এই ত্যাগ স্বীকার করেই এর মধ্যদিয়ে সামনের দিকে আমাদের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। ৭ নভেম্বরের পতাকা, আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে রক্ষা করতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।'

'আসুন আমরা এই ৭ নভেম্বরে শপথ গ্রহণ করি যে, আমরা সেই লক্ষ্যকে অর্জন না করে, এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে না এনে, আমাদের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে না এনে, আমরা আর ঘরে ফিরে যাব না', বলেন তিনি।

এ বিষয়ে সবাই একমত কী না জানতে চেয়ে নেতাকর্মীদের 'হ্যাঁ' সূচক জবাবের পর বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'চলেন- আমরা সেই পথে এগিয়ে চলি। ৭ নভেম্বরের এই শপথ সফল হোক।'

৭ নভেম্বরকে তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই দিনটিতে দ্বিতীয়বার আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সুসংহত করেছিলাম। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে বের করে নিয়ে এসে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং সেইসঙ্গে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা ছিল সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের, একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করার।'

'আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান মাত্র ৪ বছরের মধ্যে বিভক্ত বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি বদ্ধ অর্থনীতি থেকে মুক্ত অর্থনীতি নিয়ে এসেছিলেন। তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন এবং দেশে তিনি বাকস্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এই অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নটা হচ্ছে- একটা জাতি হিসেবে তৈরি হওয়ার স্বপ্ন', বলেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্ব আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দী।

৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্যদিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জিয়া।

বিএনপি ৭ নভেম্বর দিনটিকে 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' হিসেবে পালন করে।

দিবসটি উপলক্ষে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। সড়কে বিছানো মাদুরে বসে নেতাকর্মীরা আলোচকদের বক্তব্য শুনেন। সেসময় নেতাকর্মীদের অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম এবং কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ‍মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh garment exports face US tariff hike

Can Bangladesh retain its foothold in US market?

As Bangladesh races against a July 9 deadline to secure a lower tariff regime with the United States, the stakes could not be higher.

16h ago