‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসাতে হবে’

জাসদ প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছবি: স্টার

বিএনপি গত ১৩ বছরে ১৩ মিনিটও আন্দোলন করেনি দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার রঙিন স্বপ্ন কর্পূরের মতো উবে যাবে।

আজ সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাসদ প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, '১৩ বছরে ১৩ মিনিটও আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি। এখন ফখরুল সাহেব আন্দোলন করতে চান। এই আন্দোলনের নাটাই কোথায় আমরা জানি। ১০ ডিসেম্বর সরকার পতন করে ক্ষমতায় যাবেন, এই স্বপ্ন, রঙিন খোয়াব, কর্পূরের মতো উবে যাবে।'

তিনি বলেন, 'সাম্প্রদায়িক শক্তির সবচেয়ে বিশ্বস্ত ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। বাংলাদেশের নালিশ পার্টি। এই পার্টি জঙ্গিবাদের প্রধান ঠিকানা। মির্জা ফখরুল তার প্রতিনিধিত্ব করছেন।'

'ফখরুল বলছেন- আমি শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করেছি। আমরা খবর পেয়েছি দুবাই থেকে কোটি টাকা আসছে। টাকার বস্তার ওপর তিনি বসে আছেন। এটা কেন ব্যক্তিগত? আমি তাকে আক্রমণ করলাম? তিনি তো একটা দলের প্রতিনিধি। আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছি', যোগ করেন তিনি।

'বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসাতে হবে' উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'মির্জা ফখরুল আপনাকে বলতে চাই, আমরা চৌদ্দদল ঐক্যবদ্ধ। এই মঞ্চ থেকে আমি আহ্বান জানাব, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে এ দেশের ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় বসাতে হবে। আমার মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে ওরা কারা হুমকি দিচ্ছে? মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, এ দেশে আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরাই বিজয়ের বন্দরে পৌঁছে যাব।'

'শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিনিধি। শেখ হাসিনা হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। শেখ হাসিনা হারতে পারে না। আমরা পরাজয় মানি না। স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে আমরা পরাজিত হব! কেন বেঁচে আছি? কাজেই এই চৌদ্দদলীয় জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা আছি। শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছেন। তিনি থাকবেন', বলেন তিনি।

কাদের বলেন, 'চৌদ্দদল, ইনু ভাই আপনারা ঠিক থাকুন। ভুল-ত্রুটি রাজনীতিতে আপনাদেরও আছে। বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তারা আবারও ক্ষমতায় আসবে?'

'ফখরুল সাহেব দূরবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে দেখে নাকি বলছেন, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নাকি ২২ হাজার চেয়ার ছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ৭০ হাজার চেয়ার সেখানে ছিল। মিথ্যা কথা বলবেন না। নিজেরা কয়েকটা সমাবেশ করে লাফালাফি শুরু করেছেন। এখন মুখ কালো কেন? মোকাবিলার ভয়ে মুখ কালো। মির্জা ফখরুলের দিকে তাকানো যায় না। রংপুর থেকে ঢাকার খবর পেয়ে তার মনটা বড়ই খারাপ', বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, '১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আপনাদের ১০ লাখ লোক টার্গেট? আগামী ৪ তারিখ চট্টগ্রামে ১০ লাখ লোক দেখে আসবেন। সেদিন চট্টগ্রাম জনতার মহাসমুদ্র হয়ে যাবে। সেদিন চট্টগ্রামে আপনাকে দাওয়াত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।'

তিনি বলেন, 'নিজের দলের নেত্রীর জন্য দেখার মতো একটা মিছিল করতে পারেননি। লজ্জা লাগে না? যা করেছে শেখ হাসিনা করেছে। আপনারা কী করেছেন? এই কথা খালেদা জিয়ার মনে কি জাগে না?'

'জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃবৃন্দকে বলতে চাই, কোন মুখে আপনারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? কী করেছেন তার মুক্তির জন্য? নেতা বানাবেন কাকে? হাওয়া ভবনের যুবরাজকে? আর রাজনীতি করবে না বলে প্রকাশ্যে মুচলেকা দিয়ে যে বিদেশ গিয়েছে। বিদেশে যে পালিয়েছে, বাংলার মানুষ তাকে মেনে নেবে না। এই নাম শুনলেই লোকে ভয় পায়। আতঙ্কে শিউরে উঠে', বলেন তিনি।

কাদের বলেন, 'ফখরুল সাহেব বলেছেন- ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে সামাল দিতে পারবেন না। ফখরুল সাহেব রাজনৈতিক কথাই বলেছি। আপনাদের দেশনেত্রীকে কেন এখনো ঘোরের মধ্যে রেখেছেন? এবারও আপনারা দোয়া মাহফিল করে তার জন্মদিবস পালন করেছেন। একটা মানুষের ৬টা জন্মদিবস কী করে হয়? বেগম জিয়াকে আর কত তেল দেবেন? ১৫ আগস্টে যতদিন আপনারা এই দিবস পালন করবেন ততদিন আপনারা পিছিয়ে পড়বেন।'

'আপনার কাছ থেকে শিষ্টাচার শিখতে হবে না। আপনাদের কী শিষ্টাচার সেটি দেখেছি। সন্তান মারা গেছে। শোকাতর মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যাকে আপনারা হত্যা করতে চেয়েছিলেন। ঘরের বাইরের সব গেট বন্ধ। এই শিষ্টাচারও আপনারা দেখিয়েছেন। আপনারা আমাদের শিষ্টাচার শেখাবেন? আপনাদের শিষ্টাচার ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট আর ১৩ নভেম্বর। সেই ইতিহাস কি ভুলে গেছেন?', বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিএনপির রিজার্ভ ৪ বিলিয়নও ছিল না। তারা এখন বলে আমরা রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছি। আমাদের ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। এই বৈশ্বিক সংকটে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। আপনাদের চেয়ে কতগুণ বেশি?'

সভাপতির বক্তব্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, 'জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এক হাতে সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা, অন্য হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে... বৈশ্বিক সংকটের আমাদের দেশেও কিছু সংকট দেখা যাচ্ছে, তবে এ সংকট সমাধানযোগ্য।'

অনুষ্ঠানে জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, 'যখনই বাংলাদেশে বড় কোনো সংকট হয়েছে, তখনই জাসদ দিক-নির্দেশনা দিয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তার ফল আমরা পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে একেরপর এক ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago