‘ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বিদায় দিচ্ছে’

মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

সরকার 'ক্ষমতা হারানোর ভয়ে' এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বিদায় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, 'হাসিনা সরকার এত ঘাবড়ে গেছে যে, এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের তারা চাকরি থেকে বিদায় দেওয়া শুরু করেছে ভয়ে।'

তিনি বলেন, 'গত পরশু খবরের কাগজে বেরিয়েছে এই যে ঋণ নিয়ে, বিদেশ থেকে ধার নিয়ে, অন্যান্য সাহায্য সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এখন আর শোধ করতে পারছে না। তারপর কী হবে? সব দেশ ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে।'

'পরিষ্কার কথা, আপনাদের আর এই দেশ শাসন করার কোনো অধিকার নেই। আপনারা দুর্নীতি-দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে আজকে দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। আপনারা দয়া করে মানে মানে কেটে পড়ুন। যদি সরে না পড়েন তবে কীভাবে সরাতে হয় তা দেশের মানুষ জানে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'অবিলম্বে সংসদ বিলুপ্ত করে পদত্যাগ করুন এবং একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার গঠন হবে।'

একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

খুলনাতেও জনতার ঢল নামবে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'সরকার বিভিন্নভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, বাধার সৃষ্টির করছে। ময়মনসিংহের বিভাগীয় সমাবেশে আপনারা জানেন পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল। ঠিক একইভাবে খুলনায়ও তারা দুই দিন আগে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে।'

'এতে করে কি লাভ হয়? মানুষ কি থেমে থাকে? মানুষ হেঁটে দলে দলে বিভিন্নভাবে সমাবেশে উপস্থিত হয়। খুলনাতেও একই ঘটনা ঘটবে, খুলনাতেও লাখ লাখ মানুষ তাদের মতো করে সমাবেশে উপস্থিত হবে,' বলেন তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।

সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ করেন, এই অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করেন, পুলিশের মানুষ হত্যা করা বন্ধ করেন। না হলে এদেশের মানুষ কোনো অত্যাচারীকে ক্ষমা করে নাই। আপনাদেরও ক্ষমা করবে না।'

তিনি বলেন, 'ইতিহাস ভুলে যান কীভাবে? দেয়ালের লিখন পড়তে পারেন না। সাধারণ মানুষের চোখের দিকে তাকান। সেটা এ কথাই বলে যে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করো, গদি থেকে সরে যাও। এই সমাবেশে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা আমাদের কথা শুনছেন, আমাদের কর্মচারী ভাইয়েরা বিভিন্ন দোকান থেকে আমাদের কথা শুনছেন। তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন যে, আজকে চালের দাম ৯০ টাকা কেন? উনি বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল খাওয়াবেন। ডালের দাম বেশি কেন, লবণের দাম বেশি কেন, চিনির দাম বেশি কেন?'

তিনি বলেন, 'এই সরকার সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ একটাই লুট। লুট করে করে, বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে।'

লোডশেডিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ধৈর্য ধরেন। বিদ্যুৎ পেয়েছেন, আবারও বিদ্যুৎ পাবেন। আমাদের জীবন তো অতিষ্ঠ। প্রতিদিন ৪-৫ বার লোডশেডিং হয়। আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো চলে না। আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হচ্ছে। মালিকরা বলছেন, এভাবে যদি চলতে থাকে, যদি বিদ্যুৎ না পাই, গ্যাস না পাই তাহলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে হবে। এসব ফ্যাক্টরি বন্ধ করলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'যে দেশে তারা (সরকার) বিদ্যুৎ ঠিকমতো দিতে পারে না, সঞ্চালন করতে পারে না, বিতরণ করতে পারে না সেখানে এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করার একটা কারণ, যেটা করতে গেলে তারা প্রচুর চুরি করতে পারে, তারা কমিশন পায়। সেজন্য তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।'

'দেখবেন চারিদিকে তাকিয়ে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করছে। আজকে সব দেশকে তারা পুরোপুরিভাবে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছে,' বলেন তিনি।

মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, নাসির উদ্দিন অসীম, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Build national unity, prevent division among people

The BNP yesterday shared its concerns over recent violence in Dhaka and Chattogram with Chief Adviser Professor Muhammad Yunus, calling for national unity to tackle such challenges.

43m ago