রাজপথে সহিংসতাকে ফাঁদ মনে করে সাবধানে এগোতে চায় বিএনপি

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ নেতারা আপাতত হরতাল বা অবরোধের মতো কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা মনে করছেন, সরকার রাজপথে সহিংসতা উস্কে দিতে চাচ্ছে। এটা এমন একটি ফাঁদ, যে ফাঁদে বিরোধী দলের পা দেওয়া উচিত না।

দলটির নেতারা বলছেন, দেশব্যাপী বিক্ষোভের সময় তাদের ৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার পরও তারা সমাবেশ ও মিছিলের মতো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন।

পাশাপাশি, কেন্দ্রীয়ভাবে ও জেলা পর্যায়ে গঠিত 'লিগ্যাল সেলে'র মাধ্যমে মামলা করে পুলিশি হামলায় নিহত ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় আইনি লড়াই লড়বেন তারা।

গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ৪ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হলেও, আমরা রাজপথ ছাড়ব না। একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাব।'

তিনি জানান, তার দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবং আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত রয়েছেন।

টুকু বলেন, 'সময় বলে দেবে, কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে আপাতত আমরা আমাদের চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখব।'

সূত্র বলছে, হরতাল বা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির জন্য দলটির এখনই কোনো পরিকল্পনা নেই।

আইনি লড়াইয়ের অংশ হিসেবে পুলিশের গুলিতে স্থানীয় ২ নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় ভোলায় মামলা করেছে দলটি। এ ছাড়া, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় মামলা করার জন্য আদালতে আবেদন করলেও আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, পুলিশের ওপর চাপ তৈরি করতে তারা মামলা করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় লিগ্যাল সেলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, 'আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। এটা গ্রহণযোগ্য নয় যে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ দেশের একজন নাগরিককে হত্যা করবে, আর তার বিচার হবে না। প্রতিকার চেয়ে আমরা সর্বোচ্চ আদালতে যাব।'

দলটির নেতারা বলছেন, গত ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর কয়েকটি স্থানে তাদের সমাবেশে হামলা করা হলেও তারা পাল্টা হামলা করতে পারেননি।

দলটির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, 'পাল্টা আক্রমণ করতে না পারার ২টি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। একটি হচ্ছে, এর ফলে কর্মীরা হতাশ হবেন এবং অপরটি হচ্ছে, এটি একধরনের বার্তা দেয় যে এই দলের আন্দোলন চালানোর মতো সাংগঠনিক শক্তি নেই।'

দেশব্যাপী বিএনপির কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে, তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল হামলার বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়াতে। কারণ, নেতাদের মতে, এটা সরকারের তৈরি ফাঁদ হতে পারে।

জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে এই কর্মসূচিগুলোতে বাধা দেওয়া হবে না।

কিন্তু বিএনপির ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সহিংস হামলা নিয়মিতই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে এবং উল্টো বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হচ্ছেন। এসব ঘটনায় বিএনপির ৪ সদস্য নিহত ও অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বনানীতে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ সিনিয়র নেতারা।

এই ঘটনার পর বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে পাল্টা আক্রমণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মহাখালী, মিরপুর, খিলগাঁওসহ আরও কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের বাঁশের লাঠি ও পাইপ নিয়ে সভাস্থলে ভিড় করতে দেখা গেছে।

গত বুধবার মুন্সীগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে যুবলীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন।

ওই দিনই রাজধানীতে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আগামী দিনে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করতে দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার আহ্বান জানান।

তবে দলের অভ্যন্তরীণরা বলছেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও সহিংসতার জন্য যে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল দলটিকে, তা মাথায় রেখে তারা সাবধানে পা ফেলতে চায়।

এবার দলটির লক্ষ্য, সরকার কতটা 'দমন-পীড়ন' করছে সেটি তুলে ধরা এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শুরু করা।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

16m ago