রাঙ্গাসহ বহিস্কৃতদের জাপায় অন্তর্ভুক্তির আদেশ রওশন এরশাদের

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। স্টার ফাইল ছবি

দলের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানকে প্রদত্ত 'স্পেশাল পাওয়ার'-কে গণতন্ত্র এবং সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে এটি স্থগিতের ঘোষণা দিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।

এ ছাড়া, পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ যাদের দল থেকে বহিষ্কার, অব্যাহতি বা নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন তাদের সবাইকে নিজ নিজ পদে দলে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দিয়েছেন।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ আজ বুধবার এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনামূলক চিঠি দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে পাঠান বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ।

জাপা চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির সর্বময় ক্ষমতার সংরক্ষক হিসেবে পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা-১; প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে গঠনতন্ত্রের বিশেষ ক্ষমতা এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ধারা ২০ এর উপধারা ২ এর সব বিধান স্থগিতের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এতে রওশন এরশাদ বলেন, '২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদিত পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা ১ এর সব বিধান অপব্যবহৃত হয়। যা গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থী। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের বিধিবিধান মেনেই তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেখানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে পার্টির সব তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এসব ধারার বিপক্ষে। এটা বাতিল চায় লাখ লাখ পল্লীবন্ধু প্রেমী কর্মী সমর্থক।'

জাপা প্রধানকে পাঠানো আদেশে রওশন এরশাদ বলেন, 'আপনার (জিএম কাদের) মন্তব্য অনুযায়ী সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ ও সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা যেমন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তেমনই নবম সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় গঠনতন্ত্রে ২০ ধারার উপধারা ১ এর সব উপধারা ও অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যখন তখন তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত কোনো ধরনের শোকজ বা বিনা নোটিশে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। একজন রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ গৃহীত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ১ (১), উপধারা-২ ও উপধারা-৩ বর্ণিত বিধানাবলীর সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ন্যূনতম কোনো মিল নেই।'

রওশন এরশাদ দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব ক্ষমতা স্থগিত করা হলো উল্লেখ করে তা কার্যকরের নির্দেশনা দেন।

রওশন এরশাদের নির্দেশনা মতে, এরইমধ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, বিগত দিনে দলের বহু সিনিয়র, অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এভাবে পার্টিকে দিনে দিনে দুর্বল করা হয়েছে। করা হয়েছে খণ্ডিত। পার্টির মধ্যে অগণতান্ত্রিক আবহ থাকায় নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং পদ হারানোর ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে আবারো পার্টি খণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রওশন এরশাদ আরও বলেন, 'এ অবস্থা অবসানের লক্ষ্যে এবং পার্টি শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গাফফার বিশ্বাস, এ ছাড়া নবম সম্মেলনের পর পদ পদবিতে না রাখা সাবেক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম বাচ্চু, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরুসহ দেশজুড়ে অব্যাহতি, বহিষ্কার ও নিষ্ক্রিয় করে রাখা সব নেতাকর্মীদের এই আদেশ জারির পর হতে যার যার আগের পদ পদবিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।'

Comments

The Daily Star  | English

Commercial banks’ lending to govt jumps 60%

With the central bank halting direct financing by printing new notes, the government also has no option but to turn to commercial banks to meet its fiscal needs.

10h ago