গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে: মির্জা ফখরুল

ছবি:স্টার

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করা হয়েছে। সেটা বাতিল করে সরকার আইন পরিবর্তন করেছে, সংবিধানে পরিবর্তন করেছে। তখন থেকেই মূলত ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।'  

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) মাপকাঠিতে বাংলাদেশকে 'হাইব্রিড' শাসনব্যবস্থার দেশ বলা প্রসঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও শহরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, 'যখন একটি সরকার জনগণের সমর্থন হারিয়ে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকে, পাশাপাশি নির্বাচনও করে, কিন্তু সেই নির্বাচনকেও নিয়ন্ত্রণ করে আবারও ক্ষমতায় যায়—তখন এই শাসনব্যবস্থার পুরো সিস্টেমটা সরকারের পক্ষে চলে যায়। এই সরকারও এইভাবে পুরো সিস্টেমটাই তাদের পক্ষে নিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা এটার প্রতিবাদেই আন্দোলন করছি।

 'হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় পরিকল্পিতভাবে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়। এসব মানুষকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়েছে, ঢাকায় প্লট দেওয়া হয়েছে। এসব দিয়ে তাদের খুশি রাখা হচ্ছে।  এই যে সুবিধাভোগী শ্রেণিটা গড়ে উঠে, এই শ্রেণিটা আর ওই জায়গা থেকে সরতে চায় না। তারা ভাবে, এ সরকারই তো ভালো। তাহলে আমাদের চুরি নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। এটা বন্ধে দেশপ্রেমিক জনগণকে বেরিয়ে আসতে হবে', যোগ করেন তিনি।     

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারি কর্মকর্তারা কী করছেন তার হিসাব-নিকাশও নেই। বর্তমানে যারা এমপি, চেয়ারম্যান আছেন তাদের কাজের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা যা খুশি তা করছেন।  ফলে গোটা সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার সে কাজগুলো করে যাচ্ছে।  জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করছে না। তারা মুক্ত গণতন্ত্রকে বহু আগেই বিনষ্ট করে ফেলেছে।'

দেশে কারও নিরাপত্তা বা বিচার নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়কেও দলীয়করণ করা হয়েছে। এখানে (ঠাকুরগাঁওয়ে) শুনলাম প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে। যে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়, সেখানে তাহলে সে কী পড়াবে?'

'এই সরকার বাংলাদেশকে যে ডাস্টবিনে নামিয়ে দিয়েছে, আমাদের নেতা তারেক রহমান এ দেশকে সেখান থেকে তুলে আনতে টেক ব্যাক বাংলাদেশের ডাক দিয়েছেন। আমরা দেশকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসতে চাই,গণতন্ত্রের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাই, মুক্ত সমাজ ব্যবস্থায় ফিরতে চাই', যোগ করেন তিনি।

দেশের বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গিয়ে বিএনপি সহাসচিব বলেন, 'দেশের মানুষের বেঁচে থাকাই এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চাল,ডাল,তেল,লবণের দাম তো আকাশচুম্বী হয়েছেই, সেইসঙ্গে অন্যান্য বিষয়ে যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এখন শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা পণ্যে পরিণত করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'একইভাবে হাসপাতালে গিয়ে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। কয়দিন আগে বিভিন্ন ধরনের ৫০টি ওষুধের দাম ৫৪ থেকে ১৩৫ শতাংশ বেড়েছে, যা মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে মূল্য বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করা হয়নি। প্রচণ্ড মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। এটা সত্যি কথা, এখন মানুষ সাধারণ জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।'

মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হকসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

 

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

7h ago