নারায়ণগঞ্জ

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে ‘তুলে নিয়ে’ নির্যাতনের অভিযোগ আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে তুলে নিয়ে ৮ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। 
নারায়ণগঞ্জ
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুল ইসলাম (বামে) ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে তুলে নিয়ে ৮ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। 

আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া মোড় থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুল ইসলামকে (৩৫) তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ তার পরিবারের। 

অভিযুক্ত বজলুর রহমান কায়েতপাড়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য।

ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, রফিকুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতি করায় বজলুর রহমান তাকে ৮ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছেড়ে দেয়।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম পেশায় নির্মাণশ্রমিক এবং চনপাড়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি প্রার্থী বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রফিকুল ইসলামের পরিবারের এক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ব্যক্তিগতভাবে রফিকুল ও বজলুরের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর বজলুর রহমান তার লোকজন নিয়ে রফিকুলের বাসায় যান। সেদিন রফিকুল বাড়িতে ছিলেন না। 

'তবে বজলুরের লোকজন সেদিন হুমকি দেয়, যেন রফিকুল বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে যান,' বলেন তিনি।

রফিকুলের দেওয়া তথ্যের বরাতে পরিবারের ওই সদস্য আরও বলেন, 'রোববার রফিকুল চনপাড়া মোড়ে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এমন সময় তাদের সামনে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার এসে থামে। গাড়ি থেকে ৩ জন গানম্যানসহ নেমে আসেন বজলু মেম্বার। পরে রফিকুলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গাড়িতে তুলে চনপাড়ায় মেম্বারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।'

ওই গাড়ির পেছনে একটি পুলিশের গাড়িও ছিল বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'তুলে নিয়ে যাওয়ার পর রফিকুলকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। হাতে ও পায়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। দুপুরে বজলু মেম্বার তার এক লোকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করেন।'

এ ঘটনায় আতঙ্কিত রফিকুল ইসলামের পরিবারের লোকজন। 

রফিকুলের পরিবারের আরেক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেম্বারের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই আমাদের। বিরোধীদলের রাজনীতি করার জন্য এভাবে ভাইকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। ভাইকে মেরে ফেলে কি না, এটা নিয়ে ভয়ে ছিলাম।'

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না থাকায় প্রায় মাসখানেক এলাকার বাইরে ছিলাম। আজ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে এলাকায় গিয়েছিলাম। রাস্তায় মেম্বার সাহেব আমারে আটকালেন। পরে গাড়িতে তুলে অফিসে নিয়ে গেলেন। হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছেন।'

বিরোধীদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণেই তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় দাবি করে তিনি আরও বলেন, 'আমাকে গাড়িতে তোলার সময় পেছনে একটি পুলিশের গাড়িও ছিল। আবার আমাকে ছাড়ার সময়ও অফিসের সামনে একজন পুলিশের পোশাক পরা একজন ছিলেন।'

রফিকুল বলেন, 'আমার মা, স্ত্রী ও ছোটবোন তার অফিসে গিয়ে কান্নাকাটি করার পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়ার সময় তিনি আমার মোবাইল ফোন রেখে দেন।'

তবে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'আমি সারাদিন ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে ছিলাম। চনপাড়া অনেক বড় এলাকা। রফিকুল নামে কাউকে আমি চিনি না। আমি বা আমার লোকজন কাউকে গাড়িতে তোলেনি।'

এ বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদের সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টার দিকে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি পুলিশকে কেউ জানায়নি। আপনার মাধ্যমেই শুনতে পারলাম। এত ঘণ্টা আটকে রেখেছে, এটা তো ৯৯৯ নম্বরে কল করেও পরিবারের লোকজন জানাতে পারতো। কেউ না জানালে পুলিশ কীভাবে জানবে?'

ঘটনাস্থলে এবং ইউপি সদস্যের কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সদস্যের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'এই ঘটনার কিছুই জানি না। কোনো পুলিশ সদস্যও সেখানে ছিল না। পরিবারের লোকজন এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবো।'

তবে রফিকুল ইসলামকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে দুপুরেই পুলিশকে জানানো হয়েছিল বলে দাবি করেন চনপাড়া ইউনিয়ন (সাংগঠনিক) বিএনপির সভাপতি হারুণ মিয়াজি। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রফিকুলের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানতে পারি। তারপরই দলের পক্ষ থেকে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।'

Comments