আমরা কোনো জোট করছি না: কুনমিংয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, মো. তৌহিদ হোসেন,
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে ত্রিপক্ষীয় জোট গঠনের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, 'আমরা কোনো জোট গঠন করছি না। মূলত উদ্যোগটি চীনের এবং এটি একেবারেই অফিশিয়াল পর্যায়ে, এটা রাজনৈতিক কোনো পর্যায়ে না।'

গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান নিয়ে ত্রিপক্ষীয় জোট গঠন হয়েছে কি না?

আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গত ১৯ জুন চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে প্রশ্ন করেন।

ভারতকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এই বৈঠক করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'এটি অবশ্যই কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করে অনুষ্ঠিত হয়নি—আমি আপনাদেরক তা আশ্বস্ত করতে পারি।'

এর আগে এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুনমিংয়ে নবম চীন-দক্ষিণ এশিয়া প্রদর্শনী এবং ষষ্ঠ চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা ফোরামের অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা একটি 'অনানুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক' করেছেন।

চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠকে ঢাকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন প্রাক্তণ ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিক।

চীন ও পাকিস্তান এই বৈঠকের বিষয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে বেইজিং জানিয়েছে, তিনটি দেশ 'ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর ব্যাপক আলোচনা' করেছে এবং 'সুপ্রতিবেশীসুলভতা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সমতা, উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি ও অভিন্ন উন্নয়নের' ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

অন্যদিকে, ইসলামাবাদ এই বৈঠককে 'বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার সূচনা বৈঠক' হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ঢাকা এই ধরনের কোনো কিছু প্রত্যাখ্যান করেছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'কোনো কিছু অস্বীকার করার দরকার নেই।'

তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'এটি বড় কিছু নয় এবং কাঠামোগত কিছু নয়।'

তৌহিদ বলেন, আলোচনা মূলত সংযোগ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে কেন্দ্রীভূত ছিল। তিনি আরও বলেন, 'যদি আরও কোনো অগ্রগতি হয়, তাহলে আপনারা জানতে পারবেন। অনুমান করার খুব বেশি সুযোগ নেই।'

ভারতের মতো সম্ভাব্য কোনো একটি কাল্পনিক দেশের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, কুনমিংয়ের মতো অন্যান্য দেশের সঙ্গেও এই ধরনের আলোচনার বিষয়ে ঢাকার কোনো আপত্তি নেই।

'ভারত যদি বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে এমন একটি বৈঠক করতে চায়, তাহলে ঢাকা পরেরদিনও বৈঠক করতে আগ্রহী থাকবে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এখন পুনর্বিন্যাসের পর্যায়ে রয়েছে এবং ঢাকার পক্ষ থেকে সেই লক্ষ্যে সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই।'

বিষয়টি আরও স্পষ্ট করতে বলতে তৌহিদ বলেন, 'দেখুন, আসুন, আমরা সত্যটি স্বীকার করি। ভারত এবং পূর্ববর্তী সরকারের মধ্যে যে গভীর সম্পর্কের পর্যায় ছিল এবং ভারত যে ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, আমাদের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্ক সেই ধরনের নয়।'

কুনমিং বৈঠকে, তিন পক্ষ অবকাঠামো, সংযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, সমুদ্র ইস্যু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।

ঢাকার তথ্য অনুসারে, প্রতিনিধি দলগুলো উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি, সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ এবং পরস্পরের জন্য লাভজনক পদ্ধতির ভিত্তিতে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

10h ago