সাম্য হত্যার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তসহ ৪ দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার ঘটনায় দ্রুত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সাম্য হত্যার ঘটনায় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ। আমরা অতি দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার চাই।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক আরও উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, 'একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষক নেটওয়ার্কের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ঢাবি ক্যাম্পাসে চলাচলের রাস্তা বন্ধের বিরোধিতা করায় প্রশাসন নাকি তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আর এর ফলেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এবং একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।'
'এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অসার ও অযৌক্তিক' উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সম্পর্কই নেই। আমরা বারবার বলে এসেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে তা করতে হবে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে। শিক্ষক নেটওয়ার্কের এরকম যুক্তিসঙ্গত অবস্থান আমরা সরাসরি প্রশাসনকে পরামর্শ হিসেবে জমা দেই। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করে যে, নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমে জানানো হবে।'
'এরপর এপ্রিল মাসে প্রক্টর দপ্তর চিঠি দিয়ে গণমাধ্যমে জানিয়েছে, শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা এবং অফিস চলাকালীন দিনগুলোতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ভেতরে যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। আর গণপরিবহন ও ভারী যানবাহন প্রবেশ সবসময়ই নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তাহলে রাত ১০টার পর তো প্রক্টর অফিসের সিদ্ধান্তেই ক্যাম্পাস এবং উদ্যানের মন্দির গেট খোলা থাকছে,' বলা হয় বিবৃতিতে।
'এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের কী ভূমিকা' এমন প্রশ্ন রেখে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এ ধরনের প্রচারণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষকরা সবসময় শিক্ষার্থীবান্ধব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখার পক্ষপাতি। জুলাই আন্দোলনসহ বিগত স্বৈরাচারী সময়ে নিপীড়ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাশে শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষকরাই থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ নিয়ে নেটওয়ার্কই বরাবর ভেবে এসেছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করেছে।'
'তবে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর এক গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি করছি, এই অপরাধের দ্রুত, স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে,' বলা হয় বিবৃতিতে।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, 'আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, গত কয়েক মাসে সংগঠিত বেশ কয়েকটি অপরাধ যা ক্যাম্পাসের ভেতরে, ক্যাম্পাসের মানুষের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, যেমন ফজলুল হক হলের ভেতরে শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংঘটিত তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির কর্মচারী দ্বারা ক্যাম্পাসের ভেতরে যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীর জন্য ন্যায়বিচার বা এমনকি বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রায় চারুকলায় অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং বিচারকাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। এ ব্যর্থতা কি ক্যাম্পাসের রাস্তা বন্ধ করে আটকানো যেত, যেখানে প্রতিটি অন্যায়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জড়িত? এর আগে দেখা গেছে প্রক্টরিয়াল টিমের গোচরেই জুলাইয়ের আন্দোলনের সময়ে আঁকা স্বৈরাচারের গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। অল্প কয়েকমাসেই দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তার দায়িত্বে থাকার নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলেছেন।'
ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কার্যকর ও যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি চারটি দাবিও জানিয়েছেন তারা।
দাবিগুলো হলো:
১. শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ, দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা নিতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্তে অংশীজনের মতামত নিতে হবে এবং জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলিং এবং ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে সেসব মাধ্যম বা প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে অতিসত্ত্বর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিদ্বেষমূলক কন্টেন্ট সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
Comments