রাষ্ট্র-এস্টাবলিশমেন্টে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের দাবি তুলুন: মাহফুজ আলম

মাহফুজ আলম। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্র ও এস্টাবলিশমেন্টে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

একইসঙ্গে ফ্যাসিবাদী শক্তি ও দালালদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঘাত করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।

'কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা' শিরোনামে ওই পোস্টে মাহফুজ বলেন, 'ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। কাজের দায় সরকারের, কিন্তু কাজ করে ক্ষমতার অন্যান্য ভরকেন্দ্র।'

তিনি আরও বলেন, 'জোড়াতালি দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব না, সম্ভব নয় নূতন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।'

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরের পর সহযোগী ভূমিকায় নেই। কিন্তু, তারা প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশে স্টেক নিয়ে বসে আছে বলেও মনে করছেন উপদেষ্টা মাহফুজ।

তিনি বলেন, 'এস্টাবলিশমেন্ট দ্বিদলীয় বৃত্তে ফিরতে এবং ছাত্রদের মাইনাস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।'

সরকারের কেন্দ্রে প্রায় তিন ডজন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, 'এস্টাবলিশমেন্ট ছাত্র প্রতিনিধিদেরকে রাষ্ট্রপতি অপসারণের ঘটনার পর থেকে কোনঠাসা করে রেখেছে। আমরা দুজন সর্বোচ্চ ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট করতে পারছি, কিন্তু প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে হলে সরকারে সুষম ছাত্র প্রতিনিধিত্ব লাগবে।'

'ছাত্রদের কয়েকটি দল হয়ে যাওয়াতে তারা এখন বিভক্ত, তদুপরি অন্য রাজনৈতিক দলের মতই তারা ট্রিটেড হচ্ছেন। এজন্য নাগরিক কমিটিই ছিল দীর্ঘমেয়াদে অভ্যুত্থানের ফোর্স হিসেবে টেকসই,' বলেন তিনি।

'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্ম দেশব্যাপী ছাত্রদের গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অভুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত ও দ্বিধান্বিত।  
সামরিক- বেসামরিক আমলাতন্ত্র কম্প্রোম্পাইজড,' বলেন তিনি।

উপদেষ্টা মাহফুজ আরও বলেন, 'মিডিয়া ও ব্যবসায়ে লীগের আধিপত্য কমেনি। লীগের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে হাত দেয়া যায়নি। পুরাতন দ্বিদলীয় বন্দোবস্ত টিকে গেছে। বিচার বিভাগ এখনো দ্বি-দলীয় বৃত্তে বন্দী।'

তিনি আরও বলেন, 'বাম-ডানের কালচারাল ক্যাচাল জুলাইকে দুর্বল করেছে এবং শাহবাগ-শাপলাকে চিরন্তন করে তুলেছে। ডানপন্থীরা ভুল রাজনীতি করেছেন এবং নূতন বাস্তবতায় আবগের বশে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছেন।  বামপন্থীরা প্রথম থেকেই সরকারের প্রতি স্কেপ্টিক্যাল এবং অভ্যুত্থানের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রাখতে অসফল।'

শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সবচেয়ে ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি আর কোরামবাজির খপ্পরে পড়েছেন। আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ হাতেগোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে, কিন্তু ডিমোরালাইজড হয়েছে সমগ্র ছাত্র- জনতা। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রতিষ্ঠান ও নূতন সিভিল সোসাইটি গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক এলায়েন্সের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার কোনো হিস্যা নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'শহীদ-আহতদের ক্ষেত্রে এবং বিচারের প্রশ্নে সরকারসহ সব অংশীজন অসফল। অভ্যুত্থান শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়নি। এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থবাদী চিন্তা ও কর্মের সাথে সাথে ছাত্রদের অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব এজন্য দায়ী।' 

'সর্বোপরি ছাত্রদের মাইনাস করে (ছাত্রদের ব্যর্থতা অনস্বীকার্য বটে) দ্বিদলীয় বন্দোবস্তে ফেরার জন্য এস্টাবলিশমেন্ট অপেক্ষমান। ছাত্রদের পরিপূর্ণ অসহযোগিতার মুখে ইতোমধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।

এ অবস্থায় সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, 'রাষ্ট্র ও এস্টাবলিশমেন্টে ছাত্রদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঘাত করা। এগুলো করার পূর্বশর্ত হলো, ছাত্রদের মধ্যে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা। পুরাতন বন্দোবস্তের সৈনিকদের অকার্যকর করে তোলা।'

এই ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যে সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের থাকায় 'কী উপকার হচ্ছে', এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ বলেন, 'না থাকলে আরও ক্ষতি হলে, রাষ্ট্র অভ্যুত্থানবিরোধীদের হাতে গেলে দায় কি নিবে, বলেন। ছাত্রদের ন্যায্য হিস্যার দাবি তোলেন...যা আছে, তা হারিয়ে গেলে আমাদের কারোর নিরাপত্তা থাকবে না। আপনারা এস্টাবলিশমেন্টের চেহারা এখনো দেখেননি। ছাত্রদের নামানোর এজেন্ডা অভ্যুত্থানের পক্ষের কিছু না, এতে কারা লাভবান হবে এটা স্পষ্ট। রাষ্ট্রে ছাত্রদের হিস্যা ও প্রতিনিধিত্বের দাবি তোলেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

6h ago