গুম: ‘ফিরে না আসা ৩৩০ জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ’

গুম ব্যক্তিদের সন্তান
গুম হওয়া প্রিয়জনদের ছবি হাতে শাহবাগের সমাবেশে ৩ শিশু। স্টার ফাইল ফটো

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, কমিশনের কাছে জোরপূর্বক গুমের শিকার এমন ৩৩০ জনের তালিকা আছে, যারা এখনো ফিরে আসেননি। ওই ব্যক্তিদের ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কমিশন প্রধান।

এই ৩৩০ জনের ভেতর কেউ ভারতের কারাগারে কিংবা অন্য কোথাও আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গত আড়াই বছরে ভারতের কারাগারে বন্দি ১ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশির তালিকা আমরা পেয়েছি। তাদের ভেতর গুমের শিকার কেউ আছেন কিনা তা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।

এছাড়া গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ১৪০ জনের একটি তালিকা যাচাই করে সেখানে গুম হওয়ার কারও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

কমিশন প্রধান আরও জানান, তারা মোট এক হাজার ৭৫২টি গুমের অভিযোগ পেয়েছেন। এর ভেতর এক হাজারটির তদন্ত হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা দেখেছি তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত।'

পলাতক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক গুমের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে মইনুল ইসলাম বলেন, কমিশন এই অপরাধে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।

তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ৪৫ জন সদস্যের সাক্ষাৎকারও নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের অন্য চার সদস্য—হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

৫ আগস্টের পর গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা লুকাতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের (জেআইসি) প্রমাণাদি নষ্ট করার বিষয়ে কমিশন বলছে, এই দায় কে নেবে তা তদন্তের বিষয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়েও কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যা এখনো কার্যকর হয়নি।

এ ব্যাপারে কমিশন প্রধানের ভাষ্য, গেপ্তার করা না গেলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, 'কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন যে তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ মেনেই কাজ করতেন। কিন্তু গুমের তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ম্যান্ডেট আছে এই সরকারের। সুতরাং এখন যারা জেনারেলদের পালাতে সাহায্য করছেন তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করছে না। এটি আপনাদের ব্যক্তিগত দায়।'

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ২৭ আগস্ট গুম-সংক্রান্ত এ তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে 'আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ' শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন।

Comments

The Daily Star  | English

AL attack on NCP rally venue: Four killed as violence grips Gopalganj

At least four people were killed and dozens injured in daylong running battles between law enforcers and Awami League followers in Gopalganj yesterday.

6h ago