শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল: সদস্যসচিব পদ নিয়ে টানাপড়েন

জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের নাম প্রায় নিশ্চিত হওয়ায়, দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সদস্যসচিব হিসেবে কে আসছেন এনিয়ে নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ এবং প্রধান সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নতুন দলের সদস্য সচিব পদের জন্য এগিয়ে আছেন।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে পারেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি এখন নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পদ নিয়ে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।

একটিতে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদলের নেতারা, যারা আগে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের অন্তত তিন জন নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে আগে জড়িত ছিলেন তারা দ্বিতীয় গ্রুপে এবং তৃতীয় অংশে রয়েছেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সদস্যরা।

সূত্র জানায়, নাগরিক কমিটির মধ্যে প্রথম অংশ আখতারকে সমর্থন করছে, অন্যদিকে নাগরিক কমিটির নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী উপদেষ্টা মাহফুজ আলম চান নাসীরউদ্দীন নতুন দলের সদস্য সচিব হন।

সূত্র আরও জানায়, ছাত্রশক্তি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাহফুজের সঙ্গে 'ব্যক্তিগত বিরোধ' থাকায় সাবেক ছাত্রশক্তি নেতাদের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন আখতার।

অন্যদিকে, সাবেক শিবির কর্মীরা শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য জুনায়েদকে নতুন দলের দ্বিতীয়-ইন-কমান্ড পদে আনার চেষ্টা করছেন।

বামপন্থী অংশটি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়কে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে চায়।

জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন সদস্য জানান, যেহেতু নতুন রাজনৈতিক দলটি অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে চায়, তাই বিভিন্ন মতের মানুষও এর অংশ। শিবির চায় তার সাবেক নেতারা নেতৃত্বের ভূমিকায় আসুক। বামপন্থীরা প্রথমে আখতারকে দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণে নেতা হিসেবে চাইলেও এখন আর তাকে সমর্থন করে না।

নাগরিক কমিটি গত কয়েক সপ্তাহে এই বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।

সূত্র জানায়, শিবির নেতৃত্বাধীন অংশটি জুনায়েদকে নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব এবং শীর্ষ ১০টি পদের মধ্যে কমপক্ষে চারটি পদ দাবি করেছে।

এমনকি দাবি মানা না হলে জাতীয় নাগরিক কমিটি ত্যাগ করে নতুন করে সংগঠন তৈরির হুমকিও দিয়েছেন তারা।

সূত্র জানায়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে 'ইতিবাচক সংকেত' না পাওয়ায়, গতকাল বিকেলে তাদের কার্যালয়ে প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক বয়কট করেছে তারা।

বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজন ছাত্র নেতাকে সরব হতে দেখা গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, 'আমার ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিতে আসা আখতার হোসেন এর হাত ধরেই। এদেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ওনার ভালোবাসা সবসময় আমাদের মুগ্ধ করেছে। ঢাবি ক্যাম্পাসে একক নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবসময় রুখে দাঁড়িয়েছেন। … সচেতন নাগরিক হিসেবে আখতার হোসেনের পাশে আছি। কাউরে নিয়া ষড়যন্ত্র কইরেন না।'  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মির্জা গালিব ফেসবুকে লিখেছেন, নাগরিক কমিটির উচিত ছিল অভ্যুত্থানের সাথে থাকা সকল তরুণদের নিয়ে একসাথে একটা রাজনীতি তৈরি করা।... মাদ্রাসা ছাত্রদের এবং শিবিরের যেন প্রপার পার্টিসিপেশান থাকে।... কিন্তু দুঃখজনকভাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি একটা গণতান্ত্রিক ইনক্লুসিভ পরিবেশ তৈরি করতে পারতেছে বলে মনে হইতেছে না।'

ডেইলি স্টার নাসীরুদ্দীন, আখতার, জুনায়েদ এবং সারজিসের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন কল এবং টেক্সটের জবাব দেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

6h ago