জেলা পরিষদ বিলুপ্তির প্রস্তাব করতে পারে জনপ্রশাসন কমিশন

জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে উপজেলা পরিষদকে আরও  শক্তিশালী করার সুপারিশ করতে পারে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

সংস্কার কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকদের কার্যালয় এবং জেলা পরিষদ নিজেদের কাজে সহযোগিতা ও সমন্বয় না থাকায় কমিশন এই সুপারিশ করার চিন্তা করছে।

তারা আরও জানান, জেলা পরিষদ যেসব কাজ করে সেগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও অন্যান্য দপ্তরের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

উপজেলা পরিষদকে ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা হিসেবে উপজেলা পরিষদে 'হস্তক্ষেপ' করার আইনি বিধান বাতিলের প্রস্তাব করতে পারে।

এছাড়া, "উপজেলা পরিষদ সচিব" হিসাবে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের প্রস্তাবও দিতে পারে কমিশন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় আইন-শৃঙ্খলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পাবলিক পরীক্ষা ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে এবং উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন কর্মসূচি, মাধ্যমিক শিক্ষা, এনজিও, সমবায় এবং অন্যান্য কিছু বিষযয়াদি পরিচালনা করবে।

সংস্কার কমিশনের সদস্যরা মনে করেন এই পদক্ষেপ ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে টানাপড়েনের অবসান ঘটাবে।

তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই প্রস্তাব সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে, যেখানে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি প্রশাসনিক ইউনিটের শাসন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত থাকবে।

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে উপজেলা পরিষদ থাকলেও জেলা পরিষদ কেন বিলুপ্ত করতে হবে?

এছাড়া কমিশন উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য সরাসরি নির্বাচন বন্ধের প্রস্তাব দিতে পারে। প্রস্তাবে উপজেলা পরিষদের দুটি ভাইস-চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

বর্তমানে একজন সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দুই থেকে তিনটি উপজেলা তদারকির দায়িত্বে আছেন। কমিশন প্রতিটি উপজেলার জন্য একজন সার্কেল এএসপি নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে।

গাড়ির জন্য সুদবিহীন ঋণ

প্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা বাতিল করার সুপারিশ করতে পারে।

বর্তমানে উপসচিব এবং তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ এবং একজন চালক নিয়োগ এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচের জন্য মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাতা পান।

সূত্র জানায়, কমিশনের সদস্যরা করদাতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করার জন্য এই সুবিধাগুলো বন্ধ করতে চান। সেইসঙ্গে তারা মনে করেন প্রশাসনে নেই এমন কর্মকর্তাদের প্রতি এটি 'বৈষম্যমূলক'।

প্রশাসন কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ির ঋণ ২০১৭ সালে চালু করা হয়। এরপর থেকে ২৫টি অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা একই ধরনের সুবিধা দাবি করে আসছেন।

সূত্র জানায়, সংস্কার কমিশনের ১১ সদস্যের বেশিরভাগই গাড়ি ঋণ অগ্রহণযোগ্য নয় বলে একমত। তবে, তারা আজই সিদ্ধান্ত নেবেন যে এটি বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে কিনা।

পদ খালি না থাকলেও কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া বা সুপারনিউমারারি পদোন্নতি বাতিলের সুপারিশও করতে পারে কমিশন।

সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে সংস্কার কমিশন আগামীকাল ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশগুলো হস্তান্তর করবে।

এই প্রস্তাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য দুটি পৃথক কমিশন গঠনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

যেমন- ২০০৭ সাল থেকে বিচার বিভাগে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন রয়েছে যা নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি তত্ত্বাবধান করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত এই কমিশন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করছে না। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো জনস্বার্থ রক্ষা করা যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের পক্ষপাতদুষ্ট বলতে না পারে।'

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো সুপারনিউমারারি পদোন্নতির জন্য বছরের পর বছর ধরে তদবির করে আসছেন নন-এডমিশন ক্যাডার কর্মকর্তারা।

৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর, অনেক উপসচিব, যুগ্মসচিব এবং অতিরিক্ত সচিবকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর ফলে আরও ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই ধরনের পদোন্নতির দাবি করছেন।

বর্তমানে ২৬টি ক্যাডারে মোট পদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। যার মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার পদ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের। ফলে এই দুটি ক্যাডারকে আলাদা সেবা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া বিদ্যমান ২৬টি ক্যাডারকে ১২-১৩টি স্বতন্ত্র সার্ভিসে একীভূত করার প্রস্তাবও রয়েছে। এই পুনর্গঠনের আওতায় প্রশাসন ক্যাডারকে খাদ্য (সাধারণ) এবং সমবায় ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস গঠন করা হতে পারে।

একইভাবে, বাণিজ্য, শুল্ক এবং কর ক্যাডারকে একত্রিত করে  রাজস্ব  সার্ভিসে তৈরি করা হতে পারে।

সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, রেডিও ইঞ্জিনিয়ারিং এবং রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিভিন্ন প্রকৌশল-সম্পর্কিত ক্যাডারকে একটি একক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসে একীভূত করা হতে পারে।

বর্তমানে চারটি বিভাগসহ তথ্য ক্যাডারও পুনর্গঠনের মুখে পড়তে পারে। তথ্য (রেডিও), তথ্য (সংবাদ) এবং তথ্য (অনুষ্ঠান ) বিভাগগুলোকে বাংলাদেশ তথ্য সার্ভিসে সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে এবং তথ্য (রেডিও ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগকে ইঞ্জিনিয়ারিং পরিষেবার সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে।

এছাড়া কৃষি, মৎস্য এবং বন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আলাদা সার্ভিসের অধীনে নেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে এবং তথ্য প্রযুক্তির জন্য একটি নতুন সার্ভিসের বিবেচনা করা হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
IMF loan conditions

IMF conditions: Govt pledges to track graft in tax admin

The government has pledged a series of sweeping reforms to meet International Monetary Fund conditions for the next instalment of its $5.5 billion loan, including a public survey to measure corruption in tax administration and a phased reduction of subsidies on electricity, fertiliser, remittances and exports.

7h ago