যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা বন্ধের প্রভাব বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে
গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প প্রশাসনের এক নির্বাহী আদেশের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের হাজার হাজার উন্নয়নকর্মী অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
যদিও আদেশে ৯০ দিনের পর্যালোচনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তবু অনেক কর্মী ইতোমধ্যেই চাকরি হারিয়েছেন এবং প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রকল্প কর্মীদের অফিসে না যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, কর্মীরা উপস্থিতির জন্য অফিসে যাচ্ছেন তবে কোনো কাজ করছেন না।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের নির্বাহী আদেশ বা এর প্রভাব সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছে।
ঢাকায় ইউএসএআইডি-অর্থায়িত একটি প্রকল্পের মধ্যম পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলছিলেন, 'আমরা অফিসে আসি, সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটাই কিংবা নতুন কোনো স্কিল শেখার চেষ্টা করি।
'এই অনিশ্চয়তা হতাশাজনক,' বলেন তিনি।
আরেকজন প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, তাদের বাসা থেকে কাজ (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) করতে বলা হয়েছে কিন্তু তাদের কোনো কাজ নেই।
'আমরা জানি না ৯০ দিন পর আমাদের আর চাকরি থাকবে কিনা।'
নির্বাহী আদেশটি এমন সময়ে এসেছে যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক ঋণের উচ্চ পরিশোধের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চ্যালেঞ্জ।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এছাড়া বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হওয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন মানুষ কর্মসংস্থান খুঁজছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। মুদ্রাস্ফীতি এখনও ১০ শতাংশের কাছাকাছি, যা সাধারণ মানুষের ওপর আরও চাপ বাড়াচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে তহবিল সংকোচন সংকটকে আরও গভীর করবে বলে মনে করছেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন কমানো হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজের (এডিএবি) পরিচালক এ কে এম জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, 'আমরা আশা করি যে পর্যালোচনার পর নতুন মার্কিন প্রশাসন একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।'
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ৯৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।
কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার ফলে জেন্ডার, এলজিবিটিকিউ অধিকার, টিকাদান, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে আনুমানিক ২০ হাজার পেশাদার কাজ করেন। এর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা স্থগিত হলে বিক্রেতা, ডিলার এবং কয়েক মিলিয়ন সুবিধাভোগীর ওপর এর প্রভাব পড়বে।
ইতোমধ্যে আইসিডিডিআর,বি এক হাজারেরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করেছে, যাদের বেশিরভাগই ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত টিউবারকুলোসিস প্রকল্পের। এছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) আফগান শিক্ষার্থীদের অর্থায়ন স্থগিত করেছে। এর ফলে তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
এইউডব্লিউ-এর উপাচার্য রুবানা হক দ্য ডেইলি স্টারকে, 'এখানে প্রায় ৫৫০ জন আফগান শিক্ষার্থী ভর্তি আছেন, আরও ৩৩০ জনের আসার কথা। আমরা সত্যিই বড় সমস্যায় পড়েছি।' বিশ্ববিদ্যালয়টি আফগান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিকল্প অর্থায়নের জন্য আবেদন করেছে।
সঙ্কুচিত হচ্ছে উন্নয়ন খাত
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মতে, এনজিওগুলোর জন্য সাহায্য গত কয়েক বছর ধরে কমছে।
২০১৯ সালে যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ৯৪৫ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪১ মিলিয়ন ডলারে।
এনজিও কর্মকর্তারা বলেন, উন্নয়ন খাতের বেশির ভাগ চাকরি চুক্তিভিত্তিক ও প্রকল্পভিত্তিক এবং পরিষেবা সুবিধা সীমিত।
'এই খাতটি ইতোমধ্যেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। যদি যুক্তরাষ্ট্র তহবিল কমিয়ে দেয় তাহলে এর প্রভাব মারাত্মক হবে,' বলছিলেন একজন এনজিও কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে এনজিও অর্থায়নের ৫০ শতাংশের বেশি আসে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে।
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই US fund crunch hits development projects in Bangladesh লিংকে ক্লিক করুন
Comments