সম্ভাব্য সংস্কার প্রস্তাব: ১৫ বছর চাকরির পর পেনশনসহ অবসরে যেতে পারবেন সরকারি কর্মচারীরা
সরকারি কর্মচারীদের জন্য, বর্তমানে পেনশন সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসর নিতে ২৫ বছরের চাকরি করা প্রয়োজন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এই শর্ত কমিয়ে ১৫ বছর করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে।
কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে চাকরিতে থাকার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর নিতে বাধ্য করার আইনি বিধান বাতিল করারও সুপারিশ করতে পারে কমিশন।
এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪৪ এবং ৪৫ ধারা সংশোধন করতে হবে।
সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গতকাল শনিবার একটি বৈঠক করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে এসব সুপারিশ জমা দেওয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, 'বর্তমানে কোনো সরকারি কর্মচারী ২৫ বছর চাকরির আগে স্বেচ্ছায় অবসরে গেলে তারা পেনশন সুবিধা পান না। এই কারণেই কমিশন পরিবর্তনের সুপারিশ করছে।'
তবে, ১৫ বছর পরে অবসর গ্রহণকারীরা পূর্ণ পেনশন সুবিধা পাবেন না, আংশিক পাবেন। পূর্ণ পেনশনের জন্য একজনকে অবশ্যই অন্তত ২৫ বছর চাকরিতে থাকতে হবে।
কমিশনের কোনো সদস্য সুপারিশের পেছনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে রাজি হননি। তবে সূত্র জানায়, 'বেসরকারি খাতে কর্মকর্তারা প্রায়শই আরও ভালো চাকরির প্রস্তাব পান। যদি তারা ২৫ বছর ধরে চাকরিতে থাকেন, তাহলে তারা প্রায়শই সেই সুযোগ গ্রহণ করেন না কারণ তারা তাদের পেনশন সুবিধা হারাতে চান না। আমরা এটি পরিবর্তন করতে চাই।'
আরেকটি সূত্র জানায়, সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা বা বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য থাকার কারণে কোনো কর্মকর্তার জোরপূর্বক অবসরের ভয় থাকা উচিত নয়। তাই এই সুপারিশ করা হচ্ছে।'
'তবে কোনো কর্মী ভুল করলে কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় প্রক্রিয়া চালু করে তাদের অবসরে যেতে বাধ্য করতে পারে। তবে জনস্বার্থের অজুহাতে এমন অবসর বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়।'
১৫ বছর পর স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের বিকল্প কারও কারও জন্য একটি সুযোগ হতে পারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত একজন যুগ্ম সচিব বলেন, 'কাজের প্রতি আমার আগ্রহ হারিয়ে গেছে। মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলাম, দক্ষতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদেও কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমাকে ফ্যাসিবাদী সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যদি তারা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে, আমি অবসর নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাব।'
কমিশনের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে যে সুপারিশগুলো কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়নি।
'অতীতে বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। যেহেতু এই কমিশন একটি গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত হয়েছে, আমরা আশা করি সরকার তার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে।'
'আমরা জোরালোভাবে সুপারিশ করছি যে বিদ্যমান পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার বর্তমান প্রথা বন্ধ করা হোক। যারা পদোন্নতি পাবেন না, তারা চাইলে ১৫ বছর পর চাকরি ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ থাকবে।'
কমিশন তথ্য অধিকার আইনের আওতায় চাওয়া তথ্য সরবরাহের জন্য কর্মকর্তাদের নির্ধারিত সময় কমানোর প্রস্তাব দিতে পারে। এছাড়া, আইনের অধীনে জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধির সুপারিশও করা হতে পারে।
জনপ্রশাসন গবেষক এবং সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, 'সশস্ত্র বাহিনীতে ১৫ বছর পর অবসর গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ কর্মকর্তা মেজর পদে পদোন্নতির পর আর অগ্রসর হতে পারেন না, তাই তারা স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে অন্য কাজে যোগ দেন। তবে, আমি মনে করি না যে বেসামরিক প্রশাসনের অনেকেই এই সুযোগ গ্রহণ করবেন। তবে এই বিকল্প থাকলে ক্ষতির কিছুও দেখি না।'
কমিশন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সংখ্যা বর্তমান ৫৫ থেকে কমিয়ে ২৫ থেকে ৩০ করার সুপারিশ করবে।
অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স ইতোমধ্যেই সড়ক, রেল, নৌ এবং বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় একীভূত করার সুপারিশ করেছে।
কমিশন এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে ডেপুটেশনে কাজ করার অনুমতি না দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে।
সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) আদেশ-১৯৭৯ এর ভিত্তিতে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করতে পারে।
এসএসপি উদ্যোগটি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে নেওয়া হয়েছিল। এইচএম এরশাদ সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি।
সেক্ষেত্রে, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার পদোন্নতির সুযোগ আরও সীমিত হতে পারে।
তবে কমিশন উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার পদোন্নতির জন্য ৫০ শতাংশ পদ সংরক্ষণেরও সুপারিশ করতে পারে।
Comments