দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও ক্ষমতার ভারসাম্যের সুপারিশ করবে সংস্কার কমিশন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
জাতীয় সংসদ ভবন। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

আগামীকাল চারটি সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ করবে।

প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র পুলিশের হাতে দেওয়ার কথা সুপারিশ করবে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন দুদকের সচিব থেকে পরিচালক পর্যায়ের পদে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ না দেওয়ার সুপারিশ করবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সূত্র জানায়, তাদের প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব করা হবে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনারও সুপারিশ করবে এই কমিশন।

সেই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সর্বনিম্ন বয়স ২৫ বছর থেকে কমিয়ে ২১ বছর করারও সুপারিশ করবে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

নির্বাচন সংস্কার কমিশন স্পিকারের অধীনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সংসদীয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করতে পারে। নির্বাচনের সময় কোনো অনিয়মের জন্য নির্বাচন কমিশনারদের জবাবদিহি করতে হবে এই কমিটিতে।

সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য জানান, নির্বাচন সংস্কার কমিশন দ্বৈত ভোট ব্যবস্থার কথাও বিবেচনা করছে। সংসদের নিম্নকক্ষের জন্য সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী বিজয়ী হবেন এমন ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতির প্রস্তাব করা হয়েছে। সংসদের জন্য প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের জন্য কমিশন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার সুপারিশ করবে।

তবে এসব ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাননি সংস্কার কমিশনের ওই সদস্য।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রিয়াজ, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন আগামীকাল তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যাপক আলী রিয়াজ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষমতার ভারসাম্য শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সরকারের নির্বাহী বিভাগকে দায়বদ্ধ রাখতে এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে আরও প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাদের সুপারিশগুলো নিয়ে সরকারের ভেতরে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। একটি ঐকমত্যে পৌছানোর ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

গত আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর, অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে এবং জনমালিকানা, জবাবদিহিতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য কমপক্ষে ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।

সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুদকের সংস্কারের জন্য প্রথম ছয়টি কমিশন ৩ অক্টোবর গঠিত হয়। তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং বাকি পাঁচটি কমিশনের সময়সীমা ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

অন্যান্য সুপারিশ

ধারণা করা হচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংবিধানের প্রস্তাবনায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করবে।

কমিশন সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখতে এবং নির্বাহী বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এটি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলেরও সুপারিশ করবে। এর ফলে এমপিরা তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচন সংস্কার কমিশন ব্যালট পেপারে 'না' ভোট বিকল্পের পুনঃপ্রবর্তন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের সুপারিশ করবে। সেই সঙ্গে, নারীদের আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ এবং নিম্নকক্ষে আইনপ্রণেতাদের মোট সংখ্যা ৩৫০ থেকে ৪০০ করার পক্ষে সংস্কার কমিশন। এটি উচ্চকক্ষের জন্য ১০০টি আসনের সুপারিশ করতে পারে।

কমিশনের সদস্যরা জানান, তারা নির্বাচনের আগে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সুপারিশ করতে পারেন। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার ও তাদের প্রধান নিয়োগের জন্য আইন সংশোধন, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর অধীনে ইসির ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইসিকে আরও জবাবদিহিমূলক করার সুপারিশ করা হতে পারে।

প্রার্থীদের তাদের হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদ প্রকাশ করতে এবং হলফনামায় দেওয়া তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করার সুপারিশও বিবেচনা করছে সংস্কার কমিশন।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সূত্র জানায়, তাদের সুপারিশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপরও জোর দেবে কমিশন।

কমিশন ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার অধীনে রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিদের সাথে আচরণের বিষয়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করে একটি নির্দেশিকা তৈরির প্রস্তাব দেবে।

এই নির্দেশিকায় থাকবে: সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তারের পর তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে এবং অভিযানে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে; গ্রেপ্তারের কারণ রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে; গ্রেপ্তারের এক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আত্মীয়দের জানাতে হবে; আটককৃতদের একজন আইনজীবী বা আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থাকতে হবে; রিমান্ডের সময় একটি স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালযুক্ত কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। একজন আইনজীবী বা আত্মীয় এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago