নাব্যতা-সংকটে নৌ মানচিত্র থেকে বিলীন হওয়ার পথে বাঘাবাড়ী বন্দর

নৌযানের ভিড়ে একসময় সরগরম থাকলেও নাব্যতা সংকটে এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই দায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

উত্তরবঙ্গে কৃষি উপকরণ ও জ্বালানি সরবরাহের একসময়কার প্রাণকেন্দ্র বাঘাবাড়ী নদীবন্দর এখন নাব্যতা সংকট ও পর্যাপ্ত বন্দর সুবিধার অভাবে ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় নির্মিত হয় নদীবন্দরটি। প্রথম কয়েক দশক সার, তেল, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই কার্গো জাহাজের ভিড়ে সরগরম থাকত এই বন্দর।

কিন্তু এখন চট্টগ্রাম থেকে আসা সারবোঝাই জাহাজগুলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোরের নওয়াপাড়া বন্দরে পণ্য খালাস করে। সেখান থেকে সড়কপথে উত্তরাঞ্চলে কৃষি উপকরণ পরিবহন করা হয়।

নাব্যতার অভাবে শুষ্ক মৌসুমে মালবাহী জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারে না। 

নদী পথে পণ্যবাহী জাহাজের মাস্টার ইউসুফ মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় দেড় বছর আগে সারবাহী একটি জাহাজ নিয়ে নদীপথে বাঘাবাড়ী বন্দরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। কিন্তু নাব্যতা সংকটের জন্য সেখানে মাল খালাস করতে পারিনি। আরিচা কার্গোতে খালাস করতে হয়েছে।'

বাঘাবাড়ী রুটে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভারী পণ্যবাহী জাহাজ চালানো যায় না বলে অধিকাংশ শিপিং কোম্পানি এখন এ রুটে চলাচল বন্ধ করে নওয়াপাড়া বন্দরমুখী হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইউসুফ মোল্লা আরও বলেন, নওয়াপাড়া বন্দর এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টনের কার্গোবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে, যা বাঘাবাড়ী বন্দরের পক্ষে সম্ভব না।

বাঘাবাড়ী ঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডাবলুটিএর সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শুষ্ক মৌসুমে সাত থেকে আট ফুটের বেশি ড্রাফট লোড নিয়ে এ বন্দরে কোন নৌযান ভিড়তে পারে না।

সারবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০ থেকে ১২ ফুট ড্রাফট লোড নিয়ে চলাচল করে বলে জানান তিনি।

বাঘাবাড়ী বন্দরের দৈন্যদশা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

পানির সমতল থেকে নৌযানের তলার দূরত্ব অর্থাৎ একটি নৌযানের তলা পানির যতদূর নিচে যায় তাকে ড্রাফট বলে।

বাঘাবাড়ীর বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এই নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার সময় নৌযানের আকার ছোট ছিল এবং পণ্য পরিবহনের সক্ষমতাও অপেক্ষাকৃত কম ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নৌযানের আকার ও ধারণক্ষমতা বাড়লেও বন্দরের আধুনিকীকরণ হয়নি। 

বাঘাবাড়ী নদীবন্দরের শ্রমিক সরদার জাহাঙ্গির হোসেন জানান, একসময় এ বন্দরে ৪০০ থেকে ৫০০ শ্রমিক থাকতেন। কিন্তু কাজ না থাকায় এখন অনেকেই বন্দর ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকেছেন।

বর্তমানে ঘাটে ১০০ থেকে ১৫০ জন শ্রমিক থাকলেও তাদের আয় যথেষ্ট নয় বলে জানান তিনি।

বন্দরে সার পরিবহন প্রায় বন্ধ থাকায় বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)-এর গুদামে এখন সার আনা হচ্ছে নওয়াপাড়া বন্দর থেকে। তবে সেগুলোও সময়মতো পৌঁছায় না বলে অভিযোগ করেন গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আনসারী।

তিনি আরও বলেন, 'জানুয়ারিতে কেবল সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০ হাজার ২৮১ টন সারের চাহিদা আছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে সাত হাজার ৭৩৪ টন সারের মজুদ আছে।'

শুধু সার না, শুষ্ক মৌসুমে বাঘাবাড়ী বন্দরে তেল পরিবহনেও সংকট তৈরি হয়। বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত যমুনা তেল ডিপোর কর্মকর্তা মোঃ আবুল ফযল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে তেলবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ লিটার তেল পরিবহন করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীপথে ঝুঁকি থাকায় তাদের আট থেকে নয় লাখ লিটার তেল পরিবহন করতে হচ্ছে।'

বড়াল নদীর চ্যানেলটি উন্নত করা হলে পূর্ণ ক্ষমতার জাহাজই বন্দরে খালাস করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর ছিল বাঘাবাড়ী। বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে একটি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

8h ago