‘কাছ থেকে বিক্ষোভকারীদের গুলি করতে হবে, উপরের নির্দেশ’

ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

১৮ জুলাই ২০২৪, যাত্রাবাড়ী

রাত তখন ৮টা। খবর পেলাম, হানিফ ফ্লাইওভারের কাজলা টোল প্লাজায় আগুন দেওয়া হয়েছে। শুনেই রওনা দেই সেদিকে।

রাত ৯টার দিকে পৌঁছাই সায়েদাবাদ জনপদ মোড়ে। ভীষণ যানজট। অগত্য হেঁটেই রওনা হই। যাত্রাবাড়ী থানার কাছে যাওয়া মাত্রই দেখি, প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে আছে, শব্দ ভেসে আসছে প্রচন্ড গোলাগুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের।

থানার কাছে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ সদস্যরা, সঙ্গে পুলিশ। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কাজলা টোল প্লাজার দিকে যেতে চাই। কিন্তু, পুলিশের একজন বললেন, 'ওখানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে। যাওয়া নিরাপদ হবে না। আপনি এখান থেকেই তথ্য সংগ্রহ করুন।'

১০ মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পুরো সময় জুড়ে কানে এলো প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ। 

তারপর সেখান থেকে ধোলাইপাড় এলাকার খালপাড় দিয়ে কাজলা টোল প্লাজার দিকে এগিয়ে যাই। 

টোল প্লাজার কাছাকাছি খালপাড়ে আসতেই দেখি, মূল সড়ক থেকে কয়েকশ মানুষ দৌড়ে খালপাড় দিয়ে আশেপাশের অলিগলিতে ঢুকছেন। জানতে চাই, দৌড়াচ্ছেন কেন? তারা জানায়, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন ধাওয়া করছে এবং পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করছে, গুলি চালাচ্ছে। 

প্রায় আধাঘণ্টা কাজলা খালপাড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওই টোল প্লাজার সামনে যেতে পারলাম না পুলিশের গুলি ও টিয়ারসেল এবং আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেলের কারণে। এমনকি, কাউকে দেখলেই তারা লাঠি ও রড নিয়ে ধাওয়া দিচ্ছিল। 

একপর্যায়ে একটা রিকশা নিয়ে মূল সড়কে আসি। ততক্ষণে কাজলা টোল প্লাজার ছাউনি আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। 

ঘড়িতে সময় তখন রাত ১০টা। 

কাজলা টোল প্লাজার সামনে গিয়ে দেখি, কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশের পাশ থেকেই বিক্ষোভের তথ্য সংগ্রহ করছে। আমিও পরিচয় দিয়ে ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগ দিলাম। 

সেখানে পুলিশ ছিল দুই শতাধিক। তাদের মধ্যে ২০-২৫ জন একসঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে শনির আখড়ার দিকে এবং রাস্তার বিপরীত গলির দিকে শটগানের গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করছে। মাঝে মাঝে সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করছে। ফলে, কিছুক্ষণ পরপর পুরো এলাকা কেঁপে উঠছে। 

বিপরীতে দেখা গেলে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়ার দিক থেকে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজনের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। 

পুলিশ ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীরাও অলি-গলিতে ঢুকে যায়, আবার হঠাৎ করেই বের হয়ে এসে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এভাবে চলল রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত। 

এমন সময় পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সঙ্গে থাকা আওয়ামী নেতাকর্মীরা বলে, 'আপনারা অলি-গলির ভেতর থেকে যারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে তাদের ধরেন, আমরা পেছন পেছন গিয়ে তাদের আটক করে নিয়ে যাব।' 

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছিলেন, বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই বাইরের লোক, তাদের বেশিরভাগকেই আমরা চিনি না। তবে এলাকার কিছু লোকের আশ্রয়ে তারা বিক্ষোভ করছে। 

পুলিশ জানায়, এত রাতে গলির ভেতর যাওয়া নিরাপদ না। কারণ, গলির ভেতর থেকে, এমনকি আশপাশের ভবন থেকেও মানুষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। 

আওয়ামী নেতাকর্মীরা বলে, 'আমাদের হেলমেট নেই, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট নেই, পায়ে বুট জুতাও নেই। এত রাতে গলির ভেতর থেকে ইট বা কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তখন কী হবে? এত ঝুঁকি আমরা নিতে পারব না। আপনারা পুলিশ, আপনারা আগে থাকেন, আমরা পেছন পেছন আসব। আপনারা কাউকে ধরলে আমরা শনাক্ত করব যে সে বিক্ষোভকারী, নাকি এলাকাবাসী।' 

এ কথায় পুলিশ কর্মকর্তারা বেজায় ক্ষিপ্ত হন। তারা বলেন, 'তাহলে আপনারা আমাদের সঙ্গে থেকে কী করছেন? আপনাদের আর থাকার দরকার নেই, চলে যান। আমরাই দেখছি।' 

এভাবে ১০-১৫ মিনিট তর্ক চলে পুলিশ আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে এই সময়ের মধ্যে একবারের জন্যও গুলি, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেড নিক্ষেপ থামায়নি পুলিশ। মাঝে মাঝে গুলি শেষ হয়ে গেলে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে গাড়ি এসে তাদের আবার গুলি দিয়ে যায়। 

এরমধ্যে চূড়ান্ত ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন অলি-গলি ঘুরে বিক্ষোভকারীদের দিকে যাই। দেখি, তাদের বেশিরভাগই টগবগে তরুণ। রাগে-ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুলি চলা অবস্থাতেই ইট-পাটকেল জোগাড়ে ব্যস্ত। যতটুকু দূর থেকে পারছে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। তাদের অনেকেরই হাতে-পায়ে রক্ত, গায়ে জখমের দাগ ও ব্যান্ডেজ। 

আহত এক বিক্ষোভকারী জানালেন, আওয়ামী লীগের লোকজন পুলিশের সঙ্গে থেকে তাদের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। সেই ইটের আঘাতে তাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। অনেকে পুলিশের ছররা গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে আহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা ঢাকার অন্য কোনো হাসপাতালের দিকে যেতে পারছেন না চিকিৎসা নিতে। যার কারণে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ফার্মেসিতে যাচ্ছেন। 

এ সময় আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। জানালেন, তারা এলাকার সাধারণ ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগ সরকার ও পুলিশের দীর্ঘদিনের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। 

একজন বলে বসেন, 'আওয়ামী লীগ ও পুলিশের রক্ত চক্ষুকে আমরা ভয় পাই না। আমরা দাবি আদায় করেই ছাড়ব।' 

আহতরা আরও অনেকে জানান, এলাকার বড় একটা অংশ তাদের সঙ্গে আছে। অনেকেই খাবার, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করছেন। 

নিজের চোখেও দেখেছি, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিক্ষোভকারীরা যখন বিভিন্ন অলিগলিতে দৌঁড়াচ্ছিলেন, তখন এলাকাবাসী যে যেভাবে পারছেন তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন, নিরাপদে অলিগলি পার করে দিচ্ছেন। 

রাত ১২টার দিকে আবার ফিরে যাই পুলিশের দিকে। 

এসে দেখি, দুটি আর্মড ভেহিকেল থেকে বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি চলছে। পাশেই ৩০-৩৫ জন পুলিশ সদস্য থেমে থেমে টিয়ারশেল, শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে। তবে বাধ সাধে উল্টো দিকের বাতাস। বাতাসে টিয়ারসেলের ধোঁয়া পুলিশের দিকেই ফিরে আসে। তখন পুলিশ, আওয়ামী লীগের লোকজন ও সাংবাদিকরা পেছন দিকে দৌড় শুরু করে। 

টিয়ারসেলের ধোঁয়ায় আমার চোখেও তীব্র জ্বালা ও প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয়। সামনে কিছুই দেখতে পারছিলাম না। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। শুধু এলোমেলো দৌড়াচ্ছিলাম। 

পেছনে পুলিশের গুলি আর সামনে বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেল। কিছু সময় পর একটি গলিতে ঢুকে কিছু কাগজ কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে তার ধোঁয়া নিয়ে কিছুটা সুস্থবোধ করি। 

রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবার পুলিশের দিকে ফিরে যাই। শুনতে পাই, পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের অধস্তনদের বলছেন, 'এভাবে দূর থেকে গুলি করলে হবে না, বিক্ষোভকারীদের কাছে গিয়ে গুলি করতে হবে এবং তাদের ধাওয়া দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তারপর তাদের গণহারে আটক করতে হবে। ওপরের নির্দেশ আছে।' 

তখন পুলিশের অনেক সদস্য বলেন, এত রাতে গলির ভেতরে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের গুলি করা, ধাওয়া দেওয়া খুবই কঠিন। এত ঝুঁকি নিয়ে আমরা যেতে পারব না। বিক্ষোভকারীরা কাছে আসলে আমরা ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরব। 

তাদের কেউই গলির ভেতরে যেতে চাইছিল না। এ নিয়ে চলছিল বাদানুবাদ। 

রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি অফিসে। 

১৯ জুলাই ২০২৪, পুরানা পল্টন মোড় 

শুক্রবার। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে বাদ জুম্মা সমাবেশের ডাক দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সমাবেশ কাভার করতে দুপুর ১২টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করি। 

দুপুর সোয়া ১২টায় প্রেসক্লাবের দিকে বাম সংগঠনের একটি ছোট মিছিল দেখা যায়। তখন প্রেসক্লাবের সামনে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কয়েকশ পুলিশ সদস্য। মিছিল দেখামাত্রই তারা প্রায় অর্ধশত টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং ধাওয়া দেয়। পুরো এলাকা ছেঁয়ে যায় টিয়ারশেলের ধোঁয়ায়। 

জুম্মার নামাজ শেষে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে জড়ো হন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কয়েকশ নেতাকর্মী। পাশে পুরানা পল্টনের গলি এবং বিজয়নগরের দুটি গলি থেকে অল্প সংখ্যক বিক্ষোভকারী গলির মুখে ও রাস্তায় দু-একটি টায়ার, কাঠের টুকরায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছিল। তখনও পল্টন মোড়ে শতাধিক পুলিশ এবং বিজিবি সদস্য। 

বিকেল ৩টার পর পুলিশ মারমুখী হয়ে যায়। তারা পল্টন মোড় ও বিজয়নগরের আশপাশের গলিতে গিয়ে টিয়ারসেল নিক্ষেপ এবং গুলি করতে থাকে। 

গলির ভেতর থেকে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর একজন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারের (এডিসি) মোবাইলে কল আসে। আমি তখন তার পাশে দাঁড়িয়ে। অপরপ্রান্ত থেকে কী বলছিল বোঝা যাচ্ছিল না। তবে ওই এডিসি বলছিলেন, 'স্যার পুরো এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে গলির ভেতর থেকে মাঝে মাঝে দু-একটা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে, আমরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।' 

এরপর ওই এডিসি তার অধস্তনদের বলেন, 'চলো, গলির ভেতরে গিয়ে ফায়ার করি, পুরো এলাকা ফাঁকা করতে হবে।' তখনো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলছিল। 

কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা তাদের দিকে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তখন পাশের পুরানা পল্টনে গলির ভেতর পুলিশ ঢুকে এলোপাতারি গুলি চালায়। 

বিকেল ৪টার দিকে কয়েকজন হতাহতের খবর পাই। এর মধ্যে পুরানা পল্টনের গলি থেকে বেরিয়ে একটি রিকশাকে ঢাকা মেডিকেলের দিকে যেতে দেখি। সেই রিকশায় ছিল রক্তে ভেজা এক তরুণের নিথর দেহ। 

পুলিশ-বিজিবি সদস্যদের সামনে দিয়ে রিকশাটি যাওয়ার সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখি মাথা নিচু করে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, কেউ আফসোসও করছেন। 

হঠাৎ এক পুলিশ কর্মকর্তা বলে ওঠেন, 'এরা সন্ত্রাসী, এদের প্রতি কোনো মায়া-দয়া থাকতে নেই।' 

তখনো পুরানা পল্টন ও বিজয়নগরের কয়েকটা গলি থেকে বিক্ষোভকারীদের স্লোগানের শব্দ ভেসে আসছিল। কাছে গেলে কয়েকজন বিক্ষোভকারী জানান, পুলিশের গুলিতে অনেকেই হতাহত হয়েছেন, গলির ভেতর একটি মরদেহ পড়ে আছে। 

সেখান থেকে পুলিশের দিকে ফিরে এলে শুনতে পাই, ওই এডিসি তার মোবাইলে কাউকে বলছেন, 'স্যার, এখানে অনেকেই আহত হয়েছে। দু-একজন মারা গেছে। আমরা পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রনে আছি। আমরা চেষ্টা করছি পুরো এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে।' 

তারপর তিনি আবারও পুলিশ সদস্যদের গলির ভেতরে অ্যাকশন নেওয়ার জন্য বললে, অনেকেই গলির ভেতরে ঢুকতে অসম্মতি জানান। তারা বলেন, এভাবে সরাসরি গলিতে গিয়ে গুলি করতে পারবে না। তখন পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'করতেই হবে, উপরের নির্দেশ। কোনো বিক্ষোভকারী বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না। যাকে পাবে তাকেই গুলি করতে হবে।' 

এরপর পুলিশের অ্যাকশন আরও বেড়ে যায়। কয়েকজন পুলিশ সদস্য গলির ভেতর ঢুকে আবারো গুলি চালায়। সেখানেও দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ এক নিথর দেহ রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে একজন। 

এই রিকশার পেছনে পেছনে আমিও চলে যাই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের দিকে। 

তখন প্রায় সন্ধ্যা। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে যাত্রাবাড়ী, পল্টন, বাড্ডা, রামপুরা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত-নিহতদের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। জরুরি বিভাগে মানুষের ভিড়ে হাঁটাও কঠিন হয়ে যায়। অবজারভেশন রুম, ডক্টরস রুম—সব জায়গায় শুধু আহত মানুষ, আর তাদের সঙ্গে আসা লোকে লোকারণ্য। পুরো হাসপাতালের কোথাও জায়গা নেই। বারান্দায় কোনো জায়গা নাই। চারদিকে শুধু চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্না, আহাজারি, রক্ত। 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মরদেহ রাখার ছোট দুটি রুম। এর একটিতে গাদাগাদি করে রাখা প্রায় ১৫টি মরদেহ। অবজারভেশন রুমেও চারটি মরদেহ। আরও কয়েকটি মরদেহ পরে আছে জরুরি বিভাগের মেঝেতে। 

শত শত মানুষ জরুরি বিভাগে আসছেন নিহতদের খোঁজে। তখনও জরুরি বিভাগের বাইরে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তের প্রয়োজন। ঢাকা মেডিকেল সন্ধানী ও কয়েকটি প্রাইভেট ব্লাড ব্যাংকের সদস্য রক্ত সংগ্রহে ব্যস্ত। 

নিহতদের অনেকের স্বজনরা মরদেহ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছেন। কিছু সময় আগেও এই মরদেহগুলো অজ্ঞাত হিসেবে পড়েছিল। 

রাত তখন ১২টা। এক একটি মরদেহ শনাক্ত হচ্ছিল, আর তাদের স্বজনদের গগন বিদারী চিৎকারে কেপে উঠছিল পুরো হাসপাতাল। কারো কাছেই নেই তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা।

Comments

The Daily Star  | English

Indian Media Reporting on Bangladesh: Fake or Fact?"

Why is the Indian media's coverage of Bangladesh markedly different from that of Bangladeshi news outlets?

1h ago