যুগ্ম সচিবের ‘আপত্তিকর’ আচরণ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল। ছবি: সংগৃহীত

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শতাধিক কর্মচারী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে হট্টগোল করেছেন। নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে এমন পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়।

মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) ওবায়দুর রহমানের রুমের সামনে জড়ো হন কর্মচারীরা। তারা অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাদিরা সুলতানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

হট্টগোলের কারণ জানতে চাইলে উপস্থিত কর্মচারীরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও উপসচিব পদে ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারীদের নির্দিষ্ট হারে পদোন্নতি পাওয়ার কোটা রয়েছে। কিন্তু ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারীরা বিগত দিনে সেটা পরিপূর্ণভাবে পাননি।

বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে দাবি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে কমিটির অন্য সদস্যরা এই সমস্যা সমাধানে একমত পোষণ করে একটি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু নাদিরা সুলতানা প্রাথমিক অবস্থায় স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুব্ধ এক কর্মচারী জানান, মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জিয়াউর রহমানসহ কয়েকজন কর্মচারী ড. নাদিরা সুলতানার স্বাক্ষর আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যান। তখন নাদিরা জিয়াউরের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করলে এক পর্যায়ে জিয়া অজ্ঞান হয়ে যান।

জিয়াকে প্রথমে সচিবালয়ের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত কর্মচারী হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। যুগ্ম সচিবের খারাপ আচরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় গিয়ে ওই যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব দোষ যুগ্ম সচিবের —এটা একপাক্ষিক অভিযোগ। এই বিষয়টি নিয়ে অফিসারদের প্রতি যে মনোভাব দেখানো হচ্ছে সেখানেও আপত্তির জায়গা আছে। কিন্তু আমরা তাদের মতো একজোট হয়ে তর্কাতর্কি করতে পারি না, এই বাস্তবতা সবাইকে বোঝানোও যাবে না।'

উল্লেখ্য, কর্মচারীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এপিডি ওবায়দুর রহমান তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে ওই প্রতিবেদনে নাদিরা সুলতানাকে স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন। এরপর সন্ধ্যায় নাদিরা স্বাক্ষর দেন।

বিষয়টি জানার পরে বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা সাময়িকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বারান্দা থেকে সরে যান। তবে যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তারা প্রত্যাহার করেননি।

এই ব্যাপারে মন্তব্য জানতে নাদিরা সুলতানাকে অন্তত চারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস দেওয়ার পরও তিনি জবাব দেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'যারা সরকারে কাজ করেন, সবাই সরকারি কর্মচারী। কিন্তু সচিবালয়ে কিছু কর্মচারী নিজেদেরকে সরকারের মালিক মনে করেন। নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের মানুষ মনে করেন না, আপত্তিকর ব্যবহার করেন।'

'কিছু দিন আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে খারাপ ব্যবহারের কারণে বদলি করা হয়েছিল। এমন ব্যবহার আর চলবে না। আমরা কোনো অন্যায্য দাবি করিনি, যা প্রাপ্য সেটা পাচ্ছি না। সেটা যেন পাই, সেই দাবি জানিয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

নজরুল আরও বলেন, 'সবাই যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। ব্যবস্থা না নিলে সচিবালয়ের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। স্যাররা বলছেন, যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন, আমরা আশ্বস্ত হয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

7h ago