তথ্য গোপন করে নিজ জেলায় পদায়ন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের

ছবি: স্টার

তথ্য গোপন করে নিজ জেলাতেই খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে নিযুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু কাউছারের বিরুদ্ধে।

গত ৩ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আবুল আমিনের সই করা প্রজ্ঞাপনে আবু কাউছারকে পদায়নের আদেশ দেওয়া হয়।

খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা লঙ্ঘন করে এই কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা ২০১৯ এ বলা হয়েছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের পদ এবং নবম গ্রেডভুক্ত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে, সিএসডির সহকারী ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপক এবং এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে নিজ জেলায় নিয়োগ বা পদায়ন করা যাবে না। এ ছাড়াও ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে নিজ জেলায় নিয়োগ বা বদলি করা যাবে না।

লিখিত আদেশের পরদিন ওই কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন এবং আগামীকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ শুরুর কথা রয়েছে।

পদায়নের আদেশ পাওয়া আবু কাউছারের জন্মনিবন্ধন সনদ, তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও দুই মেয়ের সনদসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মো. আবু কাউছার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু হাসান।

কিন্তু তিনি তার জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম না দিয়ে নিজ 'ঢাকা' উল্লেখ ২০০০ সালে 'খাদ্য পরিদর্শক' হিসেবে চাকরি নেন।

আবু কাউছারের জন্মনিবন্ধন সনদে দেখা যায়, নিবন্ধিত ব্যক্তির জন্মস্থান 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া'। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই সনদপত্র ইস্যু করা হয়েছিল। একই তারিখে তার মেয়ের জন্মসনদও একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিবন্ধন করা হয়।

২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর তার আরেক মেয়ের নামে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমান্ডের প্যাডে একটি প্রত্যয়নপত্র নেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌল্লা খান এই প্রত্যয়নপত্রটি দেন।

মুক্তিযোদ্ধার নাতনি হিসেবে নেওয়া ওই প্রত্যয়নপত্রে তার ঠিকানা কসবা উপজেলার বামুটিয়া গ্রাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ওয়েবসাইটেও তার বাবা মো. আবু হাসানের ঠিকানা কসবা উপজেলা বলে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও, ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর আবু কাউছার চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভা থেকে একটি জন্মসনদ নিয়েছিলেন। সেখানেও তার গ্রামের নাম কসবা উপজেলার বামুটিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আবু কাউছার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, সদর উপজেলা এমনকি নিজ উপজেলা কসবাতেও কর্মরত ছিলেন। নিজ জেলার তিন উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

কসবা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আত্মীয় দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগসাজশে একটি অবৈধ ধান সংগ্রহ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। জানা যায়, এই সিন্ডিকেট কৃষকদের বঞ্চিত করে স্থানীয় মহাজনের সঙ্গে যোগসাজশে কৃষকের নামে ধান ক্রয় করে আসছিল।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক থাকাকালে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের জন্য 'কমিশনের' নামে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে সেখানকার রাইস মিলের সঙ্গে চুক্তি ও মিল লাইসেন্স নবায়ন করে ভুয়া মিলের নামে বরাদ্দের জন্য মিলপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণেরও অভিযোগ আছে। সেসময় জাতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় আবু কাউছারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত সুপারিশ করা হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলে 'সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক' হিসেবে পদোন্নতি পান মো. আবু কাউছার। তবে তার দুই মাস আগে (ফেব্রুয়ারি) নিজেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তা হওয়া স্বত্বেও রাজবাড়ী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদে আসীন হন।

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে আবু কাউছার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০ বছর আগে চাকরির কাগজপত্রে আমার নিজ জেলা ঢাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যদিও ঢাকায় আমার নিজস্ব কোনো বাড়িঘর নেই। দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে স্থায়ী ঠিকানা ঢাকা দেওয়া হয়েছে।

নিজের এবং সন্তানদের বিভিন্ন নথিতে ঠিকানা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, খুব শিগগির এগুলো ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে।

আশুগঞ্জ ও কসবা উপজেলায় কর্মরত থাকাকালে অনিয়মে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশুগঞ্জে আমি ছিলাম ফুড অফিসার, আর অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে গুদামে। আমার বিরুদ্ধে কমিশন গ্রহণের অভিযোগ সত্য নয়। কসবা উপজেলাতে কাজ হয়েছে গুদামভিত্তিক, ফুড অফিসে তো কোনো কাজ নেই। ফুড অফিস শুধু লটারি করে ধান কেনার। লটারির আবেদন অনলাইনে করতে হয়, সেটা দেখে ইউএনও। ওখানে সিন্ডিকেট করার কোনো সুযোগ ছিল না। তা ছাড়া কসবা অফিসে চাকরি করার সময় আমি সীমিত সময় দিতাম। ঢাকা থেকে কোনো সপ্তাহে যেতাম, কোনো কোনো সপ্তাহে যাওয়াও হতো না।

বিষয়টি নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারি কর্মকর্তাদেরকে তাদের নিজ জেলায় পদায়ন করা হয় না। আমরা অফিশিয়ালি বিষয়টি দেখব।'

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu now a wanted man

ICC issues arrest warrants for the Israeli PM, his former defence chief for war crimes and crimes against humanity; 66 more killed in Gaza

37m ago