মন্দির পাহারা ঘিরে ‘বিএনপি সমর্থকের গায়েবি মামলা’, কারাগারে আ. লীগের ৩০ নেতাকর্মী
মন্দির পাহারায় থাকা বিএনপি সমর্থকদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগে মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সে মামলায় জামিন নাকচ করে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলটির ৩০ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। কিন্তু যে মন্দিরের সামনে এই হামলার অভিযোগ, শরীতপুরের ভেদরগঞ্জের সেই মন্দির কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, সেখানে এমন কোনো ঘটনাই আসলে ঘটেনি।
গতকাল বুধবার শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আয়েশা আক্তার এই মামলায় আওয়ামী লীগের ৩০ নেতাকর্মীর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর এলাকার আজিজ বন্দুকছির ছেলে মেহেদী হাসান স্থানীয় বিএনপির সমর্থক। তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের আদেশে মামলাটি ভেদরগঞ্জ থানায় নথিভুক্ত হয় ২৯ সেপ্টেম্বর।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গৈড্যা দাস বাড়ি মন্দির পাহারা দিচ্ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সে সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের বের করে দিয়ে মন্দির ভাঙতে যায়। তখন বিএনপির সমর্থকরা তাদের বাধা দিলে আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালান, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং তাদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেন।
এই অভিযোগে মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান হাওলাদার, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদাৎ রাঢ়ি ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদারসহ ৪৬ জন নেতাকে আসামি করা হয়।
পরে মামলার আসামি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদাৎ রাঢ়ি ও সাধারন সম্পাদক বাবুল হাওলাদারসহ ৩০ জন নেতা গতকাল আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জামিন আবেদন করেন। তা নামঞ্জুর হলে পুলিশ তাদের জেলা কারাগারে পাঠায়।
তবে মন্দির এলাকায় হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে গৈড্যা দাস বাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি উত্তম দত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ৫ আগস্টের আগে বা পরে মন্দির বা এর আশেপাশে কোনো হামলা কিংবা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এই মন্দির পাহারা দিতেও আসেননি কেউ।'
উত্তম দত্ত আরও বলেন, 'শুনেছি আমাদের মন্দিরের সামনে মারামারির অভিযোগে কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। আমাদের মন্দির ঘিরে কেন এসব ঘটনা ঘটছে সেটা বুঝতে পারছি না।'
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করা হয় মামলার বাদী মেহেদী হাসানের সঙ্গে। কিন্তু প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেই 'ব্যস্ত আছি' বলে ফোন কেটে দেন তিনি। পরে কয়েক দফায় ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলামের ভাষ্য, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে ও চাপে রাখতেই মামলাটি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহম্মেদ বলেন, 'এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে থানায় এফআইআর করা হয়েছে। এখন তদন্ত করে দেখা হবে আসলেই সেখানে কী ঘটেছিল। আশা করছি খুব দ্রুত সঠিক রিপোর্ট আদালতে দিতে পারব। তদন্তের ভেতর দিয়েই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।'
Comments