ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের সঙ্গে মঞ্চে ওঠা তৃতীয় তরুণ কে

নিউইয়র্কে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন ড. ইউনূস। তার ডানে মাহফুজ আলম ও আয়েশা সিদ্দিকা তিথি, বামে জাহিন রোহান রাজিন। তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মঙ্গলবার দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

'ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ' আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তার বক্তব্যে তরুণদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা জানান। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের মঞ্চে ডাকেন। 

ড. ইউনূসের আহবানে তখন মঞ্চে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বর্তমানে তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি ও অপর এক তরুণ। প্রথম দুজনের ড. ইউনূসের সফরসঙ্গীর তালিকায় থাকলেও, তৃতীয়জনের নাম ছিল না। 

এই তিনজন মঞ্চে গিয়ে বিল ক্লিনটনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ড. ইউনূসের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। 

অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারের পর তৃতীয় ওই তরুণের পরিচয় নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই তরুণকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে দাবি করেছেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়া একটি ছবিতে ওই তরুণকে দেখা গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, তৃতীয় ওই তরুণ জাহিন রোহান রাজিন। হাইড্রোকো প্লাস এর প্রতিষ্ঠাতা। 

তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ নন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী মাহফুজ আলম বুধবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভের (সিজিআই) অনুষ্ঠানের মঞ্চে ওঠা ওই তৃতীয় তরুণকে অনুপ্রবেশকারী বা 'ইনট্রুডার' বলে উল্লেখ করেছেন। 

তিনি লিখেছেন, 'ওই ব্যক্তি অনুপ্রবেশকারী এবং অসৎ। তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভের আয়োজনে যোগ দিয়েছেন।' 

'আমরা তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম না। তিনি ডেলিগেশন দলের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। স্যার যখন আমাদের মঞ্চে ডাকলেন, তিনি তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে আমাদের আগে মঞ্চের দিকে ছুটে গেলেন,' বলেন মাহফুজ। 

তিনি আরও বলেন, 'আমার সন্দেহ হলেও তার মঞ্চে যাওয়া আমি আটকাতে পারিনি। উপস্থিত বিশ্বনেতা ও গণ্যমান্যদের জন্য অসহায় বোধ করছিলাম।' 

'মনে হচ্ছে, এটা ছিল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর একটি পূর্বপরিকল্পিত কাজ। আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী,' যোগ করেন তিনি। 

ভবিষ্যতে তারা আরও সতর্ক থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন মাহফুজ আলম। 

জাহিনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আমি পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসেবে। যখন ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ডাকলেন তখন আমি দর্শকসারি থেকে করতালি দিচ্ছিলাম। আমার পাশে বসেছিলেন দুই বিদেশি ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন যে, তুমি তো বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও। তাই আমিও কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গেছি মাহফুজ ভাইদের পেছন পেছন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি প্রফেসর ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস আসবেন শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম যে তার কাছাকাছি যাওয়ার একটা সুযোগ হবে।'

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহিন বলেন, '২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে একটা কাজ করে আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাস। ওই কাজের জন্যই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছিল। সেসময় ছবিটি তোলা হয়। ছবিটা কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলো, তাও আমি জানি না।'

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আন্দোলনের সময় আমি দেশেই ছিলাম। আমি নিজেই জেন-জি। সুতরাং এই আন্দোলন সমর্থন না করার প্রশ্নই আসে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

4h ago