পদ্মার ভাঙন রোধে ব্যবস্থার দাবিতে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘেরাও

ঘেরাও। ছবি: আনিস মণ্ডল/স্টার

পদ্মার ভয়াল ভাঙনের মুখে পড়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বহলবাড়িয়া ও সাহেবনগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙন থেকে বাড়িঘর ও ফসলি জমি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বৃষ্টি মাথায় জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যলয় ঘেরাও করেছেন এসব এলাকার কয়েকশ বাসিন্দা।

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে পাউবো কার্যালয় ঘেরাওয়ের এই ঘটনা ঘটে। সেখানে নদীভাঙন রোধে পাউবোর অবহেলার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, পাউবো ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে এসব এলাকার কয়েকশ বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়ক। দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে নদীগর্ভে।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের পক্ষে নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির নেতারা কথা বলেন কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের সঙ্গে। পরে ওই কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, সাহেবনগর বেড়িবাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় আজ থেকেই জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ।

রাশিদুর রহমানের এ ঘোষণার পর ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত করে স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন ঠেকাতে ফিরে যান ওই এলাকার বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে সাহেবনগর নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অপু বলেন, 'পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলবাড়িয়া, বারুইপাড়া, তালবাড়িয়া, খাদিমপুর, সাহেবনগর, মির্জানগর ও ঘোড়ামারাসহ বেশকিছু এলাকা। বিগত তিন বছর যাবৎ নদীগর্ভে শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের ছয়টি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের টাওয়ারসহ বসতবাড়ি, শতবর্ষী স্কুল-কলেজ ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী-মহাসড়ক থেকে নদী মাত্র ৫০ মিটার দূরে আছে। সড়কটি যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়বে।'

মেহেদী হাসানের অভিযোগ, এসব এলাকার ভাঙন রোধে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোনো জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেনি পাউবো।

মেহেদী দ্রুত এই প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

পাউবো প্রকৌশলীর সঙ্গে যখন ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির নেতারা আলোচনা করছিলেন, তখন কাঁদতে কাঁদতে সেখানে হাজির হন শরিফা খাতুন। নিজের বসতবাড়ি রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে সবার কাছে হাতজোড়ে করে অনুরোধ করেন তিনি।

শরিফা বলেন, কোনো ব্যবস্থা না নিলে আজকেই তার বাড়িটি নদীতে তলিয়ে যাবে।

এ কথা শুনে প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, আজ শরিফা খাতুনের বাড়ির সামনের নদীতে জিও ব্যাগ ফেলেই ভাঙন প্রতিরোধের কার্যক্রম শুরু হবে।

এ সময় এলাকাবাসী রাশিদুর রহমানকে বলেন, জিও ব্যাগ ও টিউব পৌঁছে দিলে তারা নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু করবেন।

জানতে চাইলে রাশিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি ২-৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। আমরা ব্যাপারটি অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। শুক্রবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও বেড়িবাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সেখানে দ্রুত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু হচ্ছে।'

পাউবো প্রকৌশলীর ভাষ্য, আপৎকালীন পরিস্থিতি পার করে দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য নেওয়া প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

এর আগে বিক্ষোভকারীরা বলেন, পদ্মার তীর ঘেঁষে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এটি নির্মাণের পর থেকেই তাদের বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের বক্তব্য, 'রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০০ মিটার গ্রোয়েন (বাঁধ) নদীর মধ্যে আছে। সেখানে পানি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপর পাড়ে ভাঙছে। সেটা এলাকাবাসীও ধারণা করছে। যেহেতু নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে, সেহেতু ভাঙনটা তীব্র হচ্ছে।' 

Comments

The Daily Star  | English

‘July Warriors' tax-free income limit to be Tk 525,000 from FY27 

The tax-free income limit for war-wounded freedom fighters has been increased to Tk 525,000 from FY27 from Tk 500,000 at present.

1h ago