এই জন্মদিনে বন্ধুদের নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে চেয়েছিল ফারহান

ফারহান ফাইয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

উদ্দাম ১৮ বছর বয়সকে মহিমান্বিত করেছিলেন তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। এই বয়সের তেজ ও দ্রোহের মন্ত্রকে ছন্দে বেঁধে রচনা করেছিলেন কালজয়ী কবিতা 'আঠারো বছর বয়স'। লিখেছিলেন, 'আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ/স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি/আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।'

বেঁচে থাকলে আজ ১২ সেপ্টেম্বর ১৮ বছরে পা রাখত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ফারহান ফাইয়াজ। আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাইদ নিহত হওয়ার পর ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ফারহানের নিহত হওয়ার ঘটনা এই আন্দোলনে যোগ করেছিল নতুন মাত্রা।

ফারহান ছিল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে বড় ফারহান বন্ধুমহলেও পরিচিত ছিল তার সাহসিকতা ও পরোপকারী স্বভাবের জন্য। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইন্ট্রোতে ফারহান লিখেছিল, 'একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।'

স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে জীবন দিয়ে তাকে মনে রাখার সব আয়োজন সম্পন্ন করে যাওয়া ফারহানের নিজের জন্মদিন নিয়েও ছিল ব্যাপক উৎসাহ।

আজ বৃহস্পতিবার ছেলের জন্মদিনের দুপুরে ফারহানের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবারই প্রথম ফারহানকে ছাড়াই আমরা ওর জন্মদিন পালন করছি। প্রতিবার নিজের জন্মদিন নিয়ে ও খুব এক্সাইটেড থাকত। বাবা-মা-বোনের সঙ্গে কেক কাটত। ওর মা এই দিনটাতে ওর পছন্দের সব খাবার রাঁধতেন। আবার আমরা সবাই একসঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেতেও যেতাম।'

তবে পারিবারিক আবহে জন্মদিন কাটানোর পর নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ‍নিয়েও জন্মদিন উদযাপনের প্রতি ঝোঁক ছিল ফারহানের। এ কথা জানিয়ে ফারহানের গত জন্মদিনের কথা স্মরণ করে বীমা প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ বাংলাদেশের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, 'গতবারও আমরা একসঙ্গে কেক কাটলাম, খেলাম। কিন্তু পরের দিনটা ও রাখল বন্ধুদের জন্য।'

এবারের জন্মদিন ঘিরে ফারহানের আলাদা কোনো পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে ফারহানের বাবা বলেন, 'ও গাড়ি চালাতে পারত। কিন্তু একা একা চালাতো না। পাশে ড্রাইভার থাকত। এবার ও আমার কাছে আবদার করেছিল যে জন্মদিনে ড্রাইভারকে ছাড়াই গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে লং ড্রাইভে যাবে। আমি প্রথমে রাজি হইনি। কারণ ওর তো লাইসেন্স নেই। কিন্তু ওর পীড়াপীড়িতে রাজি হয়েছিলাম।'

আজ শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন তিনি ফারহানের জন্মদিনে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে আয়োজিত এক স্মরণসভায় যোগ দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই বাবা বলেন, 'আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি। আবার ছেলের মৃত্যুর ভেতর দিয়ে শত সন্তান পেয়েছি এটাও সত্য। কিন্তু যারা আমার ছেলেসহ এত এত প্রাণ ঝরিয়ে দিলো, দ্রুততম সময়ের ভেতর তাদের বিচার চাই আমি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমার আস্থা আছে। তারা যেন আমাদের এই আস্থার প্রতিদান দেন।'

নিহত হওয়ার আগে ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথোপকথন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম বলেন, '১৭ জুলাই রাতে ও (ফারহান) পিৎজা খেতে চাইল। আমি বললাম অর্ডার করো। ডেলিভারি ম্যানের কাছ থেকে পিৎজা আমিই রিসিভ করলাম। ওকে ডেকে বললাম, তোমার পিৎজা নাও। এটাই ছিল ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt plans to include private sector in US tariff talks

Bangladesh is currently reviewing the proposals and will send a response within the next couple of days, Commerce Secretary Mahbubur Rahman told The Daily Star yesterday over the phone.

14h ago