দালালের মাধ্যমে আসছে রোহিঙ্গা, লুটপাট-ছিনতাইয়ের অভিযোগ

যে দালালরা নিয়ে আসছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন
টেকনাফে রোহিঙ্গারা। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় প্রতিদিনই নতুন করে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। তাদের অভিযোগ সীমান্তের উভয় পাশেই ছিনতাই ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন তারা।

তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর পর্যায়ক্রমে রাখাইনে শহর ছেড়ে আসার পর আরাকান আর্মি মংডু শহরে তাদের দোকানপাট লুট করেছে। অন্যদিকে নাফ নদী পার করে তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসার পথে তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশি দালালরা।

মিয়ানমারের মংডু পৌরসভার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত ২০ আগস্ট আরাকান আর্মি তার কসমেটিকসের যে দোকানটা ছিল সেটা লুট করে। এর পাঁচ দিন আগে আমি ও আমার পরিবারের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আসি। এজন্য তিন দালালের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দিই।'

'ফোনে আমি আমার এক বন্ধুর কাছে জানতে পারি আমার দোকান লুট করা হয়েছে। দোকানটিতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো মালামাল ছিল,' বলেন মোশাররফ।  

তিনি বলেন, মংডু শহরে গত ৫ আগস্ট থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে রোহিঙ্গাদের দুই হাজারের মতো দোকান লুট হয়েছে।

'জীবনে যা কিছু সঞ্চয় করেছিলাম তার সবই হারিয়েছি। এখন আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। স্বজনদের নিয়ে টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছি।'

গত বছরের নভেম্বর থেকে রাখাইন রাজ্যে তীব্র সংঘাত চলছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে গত কয়েকদিনে কয়েকশ রোহিঙ্গা নাফ নদী দিয়ে প্রতিদিন সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তের দুই পাড়েই সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছেন নতুন আসা রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা নেতাদের মতে গত ৫ আগস্টের পর নতুন করে রোহিঙ্গা এসেছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার। তবে গত ৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যাদের বেশিরভাগ ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন থেকে পালিয়ে আসে।

'আমরা মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশ কোথাও আমাদের সম্পদ রক্ষা করতে পারিনি। মিয়ানমার জান্তা বাহিনী এবং আরাকান আর্মির হাতে খুন, ধর্ষণ বা নির্যাতনের কোনো বিচার আমরা পাই না। এখন আমরা দুই দেশেই লুটপাট আর ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছি কিন্তু বিচার পাচ্ছি না, বলেন মোশাররফ।

মংডু শহরের এক ধনী ব্যবসায়ীর কথা জানান মোশাররফ যে কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে তিনি নিঃস্ব হয়ে যান।

'স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার সাদিকের মংডুতে "থ্রি ডায়মন্ডস" নামে বেশ কয়েকটি সোনার দোকান ছিল। মংডুতে আরাকান আর্মির লুটপাটের সময় আনোয়ার মিয়ানমার ছেড়ে নাফ নদী পেরিয়ে তার দোকানের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাংলাদেশে আসেন,' বলেন মোশাররফ।

আনোয়ার গত ১২ আগস্ট ২৯ কেজি স্বর্ণালঙ্কারসহ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের হাতে ধরা পড়েন এবং বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে আছেন।

'আনোয়ার স্বর্ণ নিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও তার সম্পদ বাঁচানোর জন্য তিনি কী করতে পারতেন', প্রশ্ন তোলেন মোশাররফ।

আরেকজন ভুক্তভোগী মংডুর নলবুনিয়াপাড়ার ২৬ বছর বয়সী শাবুল্লাহ বলেন, গত ১৮ জুলাই মিয়ানমারে তার তিন চাকার গাড়ি লুট করে আরাকান আর্মি। গত ১৫ আগস্ট তিনি দেশ ছাড়ার পর নৌকায় করে নাফ নদী পার হওয়ার জন্য তার পরিবারের তিন সদস্যের প্রত্যেকের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দিলেও বাংলাদেশি দালালরা তার শেষ নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।   

সীমান্তের দুই পাশেই লুটপাটের শিকার শাবুল্লাহ এখন কুতুপালং ক্যাম্পে তার স্বজনদের সঙ্গে বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দালালরা তাদের সঙ্গে আনা সবকিছু তল্লাশি করে এবং মূল্যবান কিছু পেলে লুট করে, এমনকি তাদের স্মার্টফোনও।

মংডু থেকে আসা আরেক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, তার বাবা প্রবাসী এবং তার মা হাজেরা বিবির জন্য প্রায় ৩৩৫ গ্রাম স্বর্ণ এনেছিলেন। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাদের কাছ থেকে সেসব স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায় দালালরা।

অনেক রোহিঙ্গার অভিযোগ, ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ ছাড় করতে দালালদের বাড়িতে বেশ কয়েকদিন ধরে জিম্মি করে রাখা হয় তাদের।

বাংলাদেশি দালালরা রোহিঙ্গাদের লুটপাট করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে করে রোহিঙ্গারা আরও অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বলেও জানান তারা।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদের কাছে নাফ নদী পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নতুন করে নাফ নদী পেরিয়ে কেউ বাংলাদেশে আসছে না।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আদনান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, রোহিঙ্গাদের লুটপাটের বিষয় তিনি জানেন না। তবে যে দালালরা তাদের নিয়ে আসছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে কাজ চলছে।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago