‘এখন আমাদের কেউ আটকায় না’

হেয়ার রোডে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও কার্যালয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে দিয়ে চলছে রিকশা। ছবি: স্টার

রাজধানীর হেয়ার রোডে রিকশা চলছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেল, দুটি রিকশা চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে একই সড়ক দিয়ে দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ আরও অন্তত ১০টি রিকশা চলে গেল।

মন্ত্রীপাড়া হিসেবে খ্যাত এই সড়কেই অবস্থিত বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও কার্যালয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা।

এই সড়কসহ মিন্টো রোডে রিকশা চলাচলের কোনো সুযোগই ছিল মাসখানেক আগে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতো। তখন সড়কের চেহারা একেবারেই অন্যরকম ছিল।

শুধু হেয়ার রোড নয়, ট্রাফিক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে নগরীর প্রায় সব এলাকার রাস্তাতেই চোখে পড়ছে প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা।

কারওয়ান বাজার মোড়ে রিকশা চলছে। ছবি: স্টার

গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ না থাকায় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সে সময় কয়েকদিন শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে।

তখন সড়কে যানবাহনের চাপ কিছুটা কম থাকলেও পরে সড়কগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে রিকশার মতো ধীরগতির যান সড়কে থাকলে অনেকসময় মারাত্মক দুর্ঘটনাসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

আজ সকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রিকশাচালক জুবায়ের হোসেন। তিনি জানান, ছয় মাস আগে তিনি ঢাকায় আসেন। ৫ আগস্টের আগে তিনি শুধু ফার্মগেট, নাখালপাড়া, কারওয়ান বাজার, মধুবাগ ও আশপাশের এলাকায় রিকশা চালাতেন।

'এখন আমরা শহরের যেকোনো জায়গায় যেতে পারি। তাই আয়-রোজগারও ভালোই হচ্ছে,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন জুবায়ের।

কয়েক মিনিট পর জুবায়ের রিকশা নিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সড়ক দিয়ে মগবাজারের দিকে গেলেন। ওই সড়কেও রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ।

ফার্মগেট মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় রিকশা। ছবি: স্টার

২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ পরিচালিত একটি গবেষণায় বলা হয়, ঢাকায় ১১ লাখের বেশি প্যাডেল রিকশা আছে। এ ছাড়াও, প্রায় দুই লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা সাধারণত গলির রাস্তায় চলাচল করে। কিছু প্রধান সড়কে প্যাডেল রিকশা চালানোর অনুমতি আছে।

গত কয়েকদিনে রমনা, তেজগাঁও, মিরপুর, উত্তরা, বিমানবন্দর ও মতিঝিলের বিভিন্ন প্রধান সড়ক ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার সব সড়কেই কোনো বাধা ছাড়াই রিকশা চলাচল করছে। অথচ মাত্র এক মাস আগেই এসব সড়কে রিকশা চলাচলের কোনো সুযোগ ছিল না বললেই চলে।

আগে পুলিশ কনস্টেবল বা আনসার সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড় ও গলির মুখে থাকতেন, যেন বড় সড়কে রিকশা ঢুকতে না পারে। কিন্তু সম্প্রতি তাদের আর ওইসব সড়কে দেখা যাচ্ছে না।

আরেকটি ব্যস্ত সড়ক কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে ফার্মগেটে অ্যাপেক্সের আউটলেটের সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় রিকশাচালক মজনু মিয়াকে।

এখানে কীভাবে এলেন, জানতে চাইলে মজনু হেসে বলেন, 'এখন আমাদের কেউ আটকায় না।'

তিনি বলেন, 'আগে পুলিশ ও আনসাররা ভিআইপি সড়কে গেলে রিকশার টায়ার পাংচার করত বা সিট নিয়ে যেত বা রিকশা আটক করত।'

প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল করায় প্রাইভেট কার, বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ ধীরগতির এই যান প্রায়শই লেন ঠিক রাখতে পারে না।

বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসের চালক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই অবস্থা চলতে পারে না। রিকশাচালকরা কোনো আইন মানে না। এখন সবসময় দুর্ঘটনার ভয়ে থাকতে হয়।'

এ বিষয়ে এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকজন ট্রাফিক কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, তারা এখন আর কাউকে বাধা দেন না। ৫ আগস্টের আগে-পরে তারা যে ঝামেলায় পড়েছিলেন, তা এড়াতে চাচ্ছেন।

কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কর্তব্যরত এক কনস্টেবল বলেন, 'দেখেন, রাস্তায় মাত্র কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ। আমাদের সিনিয়ররা রাস্তার পাশে থাকেন।'

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল দায়িত্ব নেওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নাজমুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা (রিকশা চলাচলের) ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আশা করছি যে দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হব।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

17h ago