মাঠে নেই পুলিশ

শাহবাগ থানা সীমিত পরিসরে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছে। থানা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তায় রয়েছেন আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা। কিছু পুলিশ সদস্য কাজে ফিরেছেন। থানাটিতে এখন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার থানার বাইরে সেনা সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পাঁচ দিন পরও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারেনি পুলিশ।

বাহিনীটির যেসব সদস্য থানায় যোগ দিয়েছেন, তারাও সেনা সদস্যদের সহায়তায় নৈমিত্তিক কাজগুলোই শুরু করছেন।

কিছু থানা কেবল সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ কাজ করছে। পুলিশ সদস্যরা হাজিরা দিয়ে চলে যাওয়ায় বাকি অধিকাংশ থানায় সুনসান নীরবতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ পরিদর্শক বলেন, 'আমরা থানায় যাচ্ছি, কিন্তু জনরোষের ভয়ে মাঠে যাচ্ছি না। কারণ, আমাদের অনেক সহকর্মী আন্দোলনের সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছেন।'

এই পরিস্থিতিতে পুলিশ সদর দপ্তর গতকাল শনিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নাগরিক কমিটি গঠন এবং থানায় পুলিশি কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৩৮টি সশস্ত্র বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় আংশিকভাবে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছে।

তবে তারা রাস্তায় টহল দেওয়া বা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করছেন না।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এক ডজনেরও বেশি পুলিশ সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই অনুপস্থিতিকে জনসাধারণ, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলাও লুণ্ঠনের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

গতকাল ঢাকার কাফরুল, শাহ আলী, পল্লবী ও ভাসানটেক থানা পরিদর্শন করা হয়েছে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে।

শাহ আলী থানায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পাওয়া গেছে। সেখানে গত দুদিনে কোনো জিডি হয়নি।

থানার একজন উপ-পরিদর্শক বলেন, 'আমরা ভয়ে আছি। পরিবারের সদস্যরাও চায় না যে আমরা বাড়ি থেকে বের হই। তারপরও থানায় আসি। কারণ, চাকরি তো করি।'

তিনি পরামর্শ দেন, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উচিত বড় আকারে বদলি করা। কারণ, স্থানীয়দের কাছে পরিচিত অনেক পুলিশ সদস্য সহজেই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।

নতুন থানায় বদলি হতে তারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। কারণ, এর ফলে স্থানীয়রা আগের সরকারের আমলে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানবে না।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাফরুল থানায় অপেক্ষা করছিলেন ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি জানান, গত ২৭ জুলাই তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় এবং তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ৭ আগস্ট তিনি কারাগার থেকে জামিন পান।

তিনি বলেন, 'থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শুক্রবার আমার ফোন ফেরত নিতে এসেছিলাম। কিন্তু থানা থেকে একজন শনিবার আসতে বলেছে। এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি, কিন্তু কোনো পুলিশ নেই।'

থানাটি পাহারায় থাকা এক সেনা সদস্য জানান, সকালে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসেছিলেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পর চলে যান।

একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, 'নিরাপত্তার আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। আমরা ইউনিফর্ম পরে বাইরে যেতে পারব না। এর ফলে সাধারণ মানুষও আমাদের সেবা পাবেন না।'

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে অনেক পুলিশ সদস্য বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথমে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ, স্থিতিশীলতা এবং প্রতিটি খাতের উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন।

রাজধানীর রমনা এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে, পুলিশ নিরাপদ ও সক্রিয় থাকলে আমরাও নিরাপদ থাকব।'

তিনি বলেন, 'পুলিশ সদস্যরা ধীরে ধীরে দায়িত্বে ফিরে আসছেন। আমাদের সবার উচিত তাদেরকে ভালবেসে গ্রহণ করে নেওয়া। আশা করি তারা দ্রুত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারবে।'

গতকাল আশুলিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) কয়েকজন কর্মকর্তা ফিরে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। আমাদের সাভার সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ওসি এএফএম সাঈদ জানান, তাদের গাড়িতে আগুন দেওয়ায় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে সময় লাগবে।

আমাদের বরিশাল সংবাদদাতা জানান, নগরী ও জেলার অন্যান্য স্থানে সীমিত পরিসরে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। কোতোয়ালি থানায় ১০ জন পুলিশ সদস্যকে সাদা পোশাকে দেখতে পান তিনি।

থানা প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'গত ৫ আগস্ট থেকে কোনো জিডি হয়নি। তবে শনিবার তিনটি মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত বা টহল দিতে যাচ্ছি না।'

বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, 'জেলার ১০টি থানা সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছে। অনেক কর্মী এখনো যোগ দেননি।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago