আমরা কাউকে মারার জন্য দেশ বানাইনি, গড়ার জন্য দেশ বানিয়েছি: ড. ইউনূস

আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। আজ দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়ায়। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যাই হোক আমরা একই পরিবার। এখন শুনছি বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-হিন্দু এটা নিয়েও আবার মারামারি চলছে। এটা যেন না হয়। কোনো ধর্মের অযুহাত করে কারো ওপর কেউ যেন অত্যাচার করতে না পারে সেজন্য রুখে দাঁড়াতে হবে। 

শনিবার বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সেখান তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

'যা হয়ে গেছে সেটা থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই' উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, 'আমরা নতুন করে পুনর্জন্ম লাভ করতে চাই। আমরা একটা পরিবার। সবাই সবাইকে রক্ষা করব, সবাইকে সবার থেকে উপরে ওঠার চেষ্টা করব এবং যারা অপরাধী তাদের বিচার আমাদের করতেই হবে। তা না হলে এর থেকে মুক্তি পাবো না। কাজেই অপরাধীকে আমরা বিচার করব। যে নিরাপরাধ তার ওপরে কোনো রকমের একটা অপবাদ লাগিয়ে দিয়ে অত্যাচার করে আমরা যেন আবার বর্বরতার দিকে না যাই। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় পালন করছি। প্রতিটা মুহুর্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যেন আমরা একত্রিত হতে পারি। আমাদের বিদেশি আক্রমণকারী নেই। আমরা আমরাই, আমরা গলাগলি করে বাঁচতে চাই। সব মতের মানুষ যেন আমরা এক হই।'

এই জাতির সারা পৃথিবীতে ভাবমূর্তি যেভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে, সে অবস্থা থেকে কীভাবে আবার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'এই জাতির সম্ভাবনা অসীম। এই জাতির যে তরুণ সম্প্রদায়, তার যে সৃজনশীলতা উদ্যোম, অন্য জাতির তুলনায় অনেক অনেক বেশি। এতটুকু জায়গার মধ্যে আমরা ১৭ কোটি মানুষ থাকি। এই ১৭ কোটি মানুষকে আমরা আরও উপরে নিয়ে যেতে পারি। শুধু এই গুতাগুতি মারামারি খুনাখুনি থেকে বাঁচতে হবে। অন্যরা কি দেখলো সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো আমরা নিজেদেরকে কি দেখতে চাই। আমাদের স্বপ্নটা কি সেটা যদি আমরা বাস্তবায়ন করি তাহলে পৃথিবীর মানুষ এমকি বাহাবা দিবে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবর্তন ও স্বাধীনতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওগুলো সব নষ্ট হয়েছে বলেই তো আজকে আমরা দুঃখের মধ্যে। কাজেই এসব পরিষ্কার না করলে আবার বর্ববতার মধ্যেই থাকতে হবে। কাজেই এটা পরিষ্কার করতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই। পচা জায়গায় নতুন তরতাজা জাতি তৈরি করতে হবে। এবং এটা আমরা পারি। শুধু আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে। বিষ থাকলেই বিপদ। এসময় তিনি বলেন নিজেদের মধ্যে একতাটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সবকিছুই সম্ভব।'

নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'এখনো আলাপ আলোচনা হয়নি। কতদিনে হলে ভালো হয় সেটা নিয়ে সবার মতামত নেওয়া হবে। যেটা ভালো হয় সেটাই করা হবে। এসময় তিনি বলেন, রংপুর একটা পিছিয়ে পড়া জেলা। এই জেলাকে এগিয়ে নিতে হবে। রংপুর বাংলাদেশের এক নম্বর জেলা হোক, এটাই প্রত্যাশা।'

সংবাদমাধ্যমের শক্তি মহান উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'আপনারা সংবাদমাধ্যম, আপনাদের মাধ্যমেই আমরা আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর জানতে পেরেছি। আপনাদের মহান শক্তি। এই শক্তিটাকে প্রয়োগ করে কীভাবে জাতিকে একত্র করা যায়, এক পরিবার বানানো যায়, কেউ যেন কাউকে না মারে। আমরা মারার জন্য দেশ বানাইনি গড়ার জন্য দেশ বানিয়েছি।'

এর আগে শনিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে রংপুরের পীরগঞ্জে যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে জাফরপাড়ায় আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে তার কবর জিয়ারত করে পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। পরে সেখান থেকে তিনি যান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে আহতদের দেখতে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান। এরপর রংপুর সার্কিট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মতবিনিময়কালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'তোমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নিরাপদে রাখবা। বলবা, সবাই আমরা ভাই। বাংলাদেশ এক পরিবার। পৃথিবীতে বহু দেশ আছে, এত সুন্দর পরিবার নাই। এত সুন্দর একটা দেশ, কোথায় চলে যেতে পারতাম আমরা! শুধু মনটা শক্ত রাখতে পারলে হতো। আর তোমাদের (তরুণ) রাস্তা খুলে দিলে আমরা মুক্ত হয়ে যেতাম।'

সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তারা কি দেশের মানুষ না? তারা কয়টা পরিবার? পুরো দেশ রক্ষা করতে পারছো, আর এ কয়েকটা পরিবারকে তোমরা (শিক্ষার্থীরা) রক্ষা করতে পারবা না? এরা তোমাদের সাথেই আন্দোলনে ছিল। বাড়ি গিয়ে দ্যাখে তার ঘর লুটপাট হয়ে গেছে। এগুলো "লুটপাটওয়ালা"দের কাজ।'

ড. ইউনূস বলেন, 'কিছু ব্যক্তি অন্যের মদদের সহিংসতা করছে। গোলমাল লাগাতে পারলে তাদের খুব মজা। সব সময় তারা চেষ্টায় আছে তোমাদের আটকে দেয়ার জন্য। নতুন বাংলাদেশ তরুণদের বাংলাদেশ। তরুণদের এখন কেউ টেনে রাখতে পারবে না। পথ পরিষ্কার করতে হবে।'

এসময় তিনি বলেন, 'বেগম রোকেয়া নারীদের মুক্ত করেছেন। এখন রংপুর পুরো বাংলাদেশ মুক্ত করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Israeli military says it killed Iran's wartime chief of staff

Israel says conducted 'extensive strikes' in Iran's west, while explosions near Tel Aviv, sirens blare across Israel; smoke rises after explosion in Iran’s Tabriz

4h ago