আটকে রেখে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করানো সংবিধান পরিপন্থি: টিআইবি

টিআইবির লোগো | সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে আন্দোলনের সমন্বয়কদের অবৈধভাবে তুলে নিয়ে গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে আটকে রেখে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করানোর ঘটনা নিরেট মিথ্যাচার, প্রতারণামূলক ও সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে এরূপ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ সোমবার দেওয়া বিবৃতিতে সংস্থাটি এই নিন্দা জানায়।

এতে বলা হয়, আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিপুল প্রাণহানি, বাছবিচারহীন মামলা ও ধরপাকড়ের মতো অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোকে বৈধতা দিতে সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর অসত্য বয়ানের ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মিথ্যাচার যে আত্মঘাতী, গণবিরোধী ও নির্মম নাটকীয়তাপূর্ণ, তা উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২০০টি মামলায় দুই লাখ ১৩ হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গণগ্রেপ্তার অভিযান চলছে। সংঘর্ষ বা সহিংসতার সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক না থাকা সাধারণ মানুষকে হেনস্তাসহ গণগ্রেপ্তার ও যথেচ্ছ মামলা দায়েরের ঘটনাকে সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সহিংসতায় যুক্তদের খুঁজে বের করতে বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযানে শুধুমাত্র সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহির কথা থাকলেও, গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারছি শিক্ষার্থী, পেশাজীবিসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সহিংসতার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ এমনকি ১৩ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত বয়সের কিশোরকেও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলার ঘটনা ঘটেছে। যা সংবিধানে দেওয়া নাগরিকের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।'

'পাশাপাশি, গ্রেপ্তারের পর উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষা করে রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে, যা মানবাধিকারেরও নির্মম লঙ্ঘন। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের ওপর ন্যস্ত সাংবিধানিক দায়িত্ব ও পেশাগত শপথ আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, আইনের রক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকলে আইনের ভক্ষকের পথ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ নাগরিককে হয়রানি বন্ধ করুন, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নিপীড়ন বন্ধ করুন।'

কথিত নিরাপত্তা প্রদানের নামে আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পাঠে বাধ্য করাকে অনৈতিক ও গর্হিত অপরাধ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'গণমাধ্যম সূত্রে যা জানা যাচ্ছে তাতে এমন মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আন্দোলনের সমন্বয়কদেরকে মূলত তুলে নিয়ে গিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। গোয়েন্দা শাখা মিথ্যাচার করছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এবং নিজেদের পেশাগত দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিচ্ছে। তা ছাড়া, "নিরাপত্তা হেফাজত"র কোনো আইনি ভিত্তি নেই। শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে আটকে রাখা সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইভাবে সমন্বয়কদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করা সংবিধানের ৩৫(৪) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। মূলত, আন্দোলন দমনের নজিরবিহীন বলপ্রয়োগের ঘটনাকে ঢাকতে এমন অসাংবিধানিক প্রচেষ্টার আশ্রয় নিয়েছে—এমন ধারণা হওয়া মোটেও অমূলক নয়।'

কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকার শুরু থেকেই ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন জবাবদিহিহীন কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে অসত্য বয়ান সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে ড. জামান আরও বলেন, 'একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে বলপ্রয়োগ করে সরকারই রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ করে দিয়ে বিষয়টিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা স্পষ্ট। নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকে পদদলিত করে গণগ্রেপ্তার, নির্বিচার মামলা, ব্লক রেইড, সাধারণ নাগরিককে হয়রানি ও সত্যের অপলাপ বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে, জোর করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি এ জাতীয় আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধ করার জোর দাবি জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English

'Bangladesh applauds 20% US tariff as ‘good news’ for apparel industry

Bangladesh has welcomed the outcome of trade negotiations with Washington, securing a 20 percent tariff rate on its exports to the US under a sweeping new executive order issued by President Donald Trump.

17m ago