একনজর দেখার আশায় আদালতের সামনে

ছেলেকে কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে সিএমএম কোর্টের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। ছবি: স্টার

সারারাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারেননি জুলেখা খাতুন। গত সোমবার দুপুর ২টার দিকে কড়াইল বস্তির বাসা থেকে তার স্বামী হেলালকে (৪৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে গতকাল ৫০৫ জনকে সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। এই ৫০৫ জনের মধ্যে হেলাল ছিলেন।

জুলেখা খাতুন জানান, খুব সকালে খাবার রান্না করে আদালতের পথে রওনা হয়েছিলেন তিনি। কারফিউর মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটার পর, বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট পেরিয়ে অবশেষে পুরান ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে পৌঁছান।

স্বামীকে এক ঝলক দেখবেন, সম্ভব হলে নিজ হাতে রান্না করা খাবার তুলে দেবেন এইটুকুই চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও স্বামীর দেখা পেলেন না জুলেখা।

'আমার স্বামী চা বিক্রি করেন। তিনি কোনো সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না, তবু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে,' তিনি দাবি করেন।

বনানী থানায় সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গতকাল হেলালকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

জুলেখা বলেন, 'স্বামীর সামান্য উপার্জন দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এখন আমরা কীভাবে সংসারের খরচ চালাবো?'

সহিংসতার মামলায় সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া ৪০ জনকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

শুধু জুলেখা নন, গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে আসা অনেকেই ভিড়ের কারণে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।

ছেলে মামুনকে খুঁজতে ফকিরাপুল থেকে আদালত চত্বরে আসেন হাফসা আক্তার (৪০)।

তিনি জানান, তার ছেলে ওই এলাকার একটি মুদি দোকানের কর্মচারী। সোমবার সন্ধ্যায় ওষুধ কিনতে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে।

জুলেখার মতো হাফসাও ছেলেকে এক ঝলক দেখতে পারেননি।

এদিকে ২১ বছর বয়সী ছেলে হৃদয়কে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখে আদালত চত্বরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন হোসনা।

তিনি জানান, তার ছেলে তেজগাঁও শিল্প এলাকার শান্তা টাওয়ারের শ্রমিক।

'আমার ছেলে কোনো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না, সোমবার বিকেল ৫টার দিকে যখন কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিল পুলিশ তখন তাকে গ্রেপ্তার করে,' দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, সারা দেশে সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আটক অভিযান চলছে। সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ১৩৩টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে ২৯টি মামলা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ১৭টি থানায় দায়ের করা মামলায় ৪৯৯ জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ৭৪ হাজার ৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

২৪টি মামলায় অভিযুক্তদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি, শুধু 'অনেক অজ্ঞাত আসামি' উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় রাজধানী ও অন্যান্য জেলায় আরও ১ হাজার ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৫ জনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১০২ জনকে, বরিশালে ৩৪ জনকে, দিনাজপুরে ১২ জনকে, রংপুরে ৩৩ জনকে, ময়মনসিংহে ৫৫ জনকে, কিশোরগঞ্জে ১২ জনকে, নরসিংদীতে ৩১ জনকে, খুলনায় ১৮ জনকে, মানিকগঞ্জে নয় জনকে, সাভারে ১০০ জনকে, রাজশাহীতে ৭২ জনকে, নারায়ণগঞ্জে ৮০ জনকে, গাজীপুরে ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত চার দিনে অন্তত ২ হাজার ৬৫৭ জনকে সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল ঢাকায় গ্রেপ্তার ৫০৫ জনকে মুখ্য হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তাদের প্রায় সবাইকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।

আদালতের নথি অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত তিন দিনে ৭৯৯ জনকে সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, ডিবি এ পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতের ১৫০ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

1h ago