যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সেই দেশ ব্যর্থ হতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'দেশের ফেরার পর থেকে একটাই চেষ্টা ছিল, যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সেই দেশ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না, সংঘাত থাকতে পারে না।'

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকা, এরপর ছয় বছর রিফ্যুজির জীবন কাটানো এবং দেশে ফেরার সময়ের কথা উল্লেখ করে আজ রোববার দুপুরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ভিত্তিটা, সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করে দিয়ে গেছেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের যে সংবিধান দিয়েছেন এবং এত কাজ যে তিনি কীভাবে করে গেছেন, সেটা ভাবতে সত্যি অবাক লাগে।'

তিনি বলেন, 'কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর বাংলাদেশ আর এগোতে পারেনি। কারণ, প্রতিনিয়ত আমাদের সেনাবাহিনীতে ক্যু, একটার পর একটা খুন হয়েছে। আর হাজার হাজার সৈনিক-অফিসারকে জীবন দিতে হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'দেশে ফেরার পরে ৭ জুন ছয় দফা পালনকালে আমি প্রথম বক্তব্যে বলেছিলাম, আমি সশস্ত্র বাহিনীতে আর কোনো বিধবার কান্না শুনতে চাই না, সন্তানহারা পিতা আর পিতাহারা সন্তানের কান্না শুনতে চাই না। আমার চেষ্টাই ছিল, যারা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে, তাদেরকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করা—যেখানে সংঘাত নয়, শান্তি থাকবে।'

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক করার জন্য যেসব কাজ করেছে তার কয়েকটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'পাঁচ বছর সরকারে ছিলাম, বাংলাদেশকে চেয়েছিলাম উন্নত করতে। ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সেই বাংলাদেশকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো, চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হই।'

এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারেনি। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, '২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি তার কারণ ছিল, আমাদের গ্যাস বিক্রি করার একটা প্রস্তাব ছিল, আমি রাজি হইনি। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাব, সেই দুর্বলতা আমার নেই।'

তিনি বলেন, 'বড় দেশ আমেরিকা, তাদের কোম্পানি গ্যাস তোলে। কিনবে ভারত। এত বড় বড় দেশের বিরুদ্ধে কথা বললে আর ক্ষমতায় থাকা যায় না। কাজেই ২০০১ সালে আমি ভোট বেশি পেলেও সরকার গঠন করতে পারিনি। কিন্তু আমার কোনো আফসোস ছিল না।'

'এরপর অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পার করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার বিজয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের পরবর্তী যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন তা তুলে ধরেন।

তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে যেসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট আজ অত্যন্ত সুসংহত বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, জাতির পিতার পরিবার—সকলের নিরাপত্তায় বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তা ছাড়া, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।'

পিজিআরের সব সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তার সরকারের আমলে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বড় দেশগুলোকেও এখন বলতে হয়, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে আমরা বিশ্বের ৩৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। যদি করোনা মহামারি না হতো, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না হতো, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন না হতো, আমরা আরও অনেক এগিয়ে যেতাম।'

তিনি বলেন, 'আজকে যেভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে আমি এর প্রতিবাদ করেছি। যখন যেখানে গিয়েছি, সেখানেই এর প্রতিবাদ করেছি—এখনো করে যাচ্ছি। এভাবে গণহত্যা, নারী-শিশুদের ওপর অত্যাচার—এটা সত্যিই সহ্য করা যায় না। আমরা সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, ন্যায়ের সঙ্গে থাকি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সবাইকে সবক্ষেত্রে একটু কৃচ্ছ্রতাসাধণ করার জন্য আমি অনুরোধ করবো। কৃচ্ছ্রতাসাধণ করে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা যদি এগিয়ে যাই, আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।'

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu now a wanted man

ICC issues arrest warrants for the Israeli PM, his former defence chief for war crimes and crimes against humanity; 66 more killed in Gaza

32m ago