কোটা বাতিল ও সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাহার আন্দোলন যৌক্তিক: ফখরুল
কোটা ব্যবস্থা বাতিল ও সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাহার আন্দোলন যৌক্তিক এবং এসব আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি একমত মলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'গত কয়েক দিন যাবত ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন করছে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ নানান সুবিধা আছে।'
তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা। সাংবিধানিকভাবে ও আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান। কিন্তু সংবিধানের ২৮ (৪) এবং ২৯ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নারী ও নাগরিকদের পিছিয়ে পড়া অংশ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ৫৬% কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসেবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।'
'প্রথম, দ্বিতীয়,তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কোনো শ্রেণিতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না এবং এটি বৈষম্যহীন জাতি ও সমাজ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক', যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরা একমত।'
তিনি বলেন, 'আইন ও বিচার বিভাগের দোহাই দিয়ে ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবি দমানোর সব অপচেষ্টাই ব্যর্থ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আশা করি, সরকার সময় থাকতে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি মেনে নেবে।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশের সব কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও কর্মচারী সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রকৃতপক্ষে এটি এই দেউলিয়া সরকারের দুর্নীতির আর একটি পথ খুলে দেওয়া। যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন, সেহেতু অন্যান্য খাতসহ শিক্ষকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে এই পেনশনের টাকা তুলে নিতে চাচ্ছে।'
'সরকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নামে নতুন স্কিম চালু করা সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামত করার একটা কৌশল। এটি এই অবৈধ ও আর্থিকভাবে দেউলিয়া সরকারের আরেকটি নতুন লুটপাট স্কিম, যার নাম পেনশন স্কিম, প্রত্যয় স্কিম ইত্যাদি', যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অর্থাৎ অংশীজনদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই স্বেচ্ছাচারী কায়দায় এই বিধান বাধ্যতামূলকভাবে চালু করতে চাচ্ছে অবৈধ সরকার। অথচ এই আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত প্যারায় এটি অপশনাল (ইচ্ছাধীন) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে শিক্ষক সমাজের যে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই যৌক্তিক ও সমর্থনযোগ্য।'
'সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতাকে পুঁজি করে শাসক গোষ্ঠীর আশীর্বাদপুষ্ট এক শ্রেণির ব্যবসায়ী লুটেরা সিন্ডিকেট ও কিছু কিছু সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সীমাহীন লুটপাট করছে। ব্যাংক ও সব আর্থিক খাত সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে তারা বিদেশে অর্থ পাচার করছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নিচ্ছে না। সেরকম পরিস্থিতিতে নাগরিকরা সারাজীবনের অর্জিত সম্পদ কোন ভরসায় এই নতুন লুটপাট স্কিমে বিনিয়োগ করবে?', প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় শূন্য, ব্যাংকিং খাত প্রায় দেউলিয়া, এরকম লুটেরাতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য এরকম পেনশন স্কিমের মতো আরো স্কিম চালু করে জনগণের পকেট শূন্য করতে চায় এই লুটেরা সরকার। সরকার তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের ঘাড়ে ব্যয়ের বোঝা চাপাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের বুলি যদি এতই শক্তিশালী হয়ে থাকে তাহলে পেনশন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। অতএব, জনগণ সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অনৈতিক তথাকথিত পেনশন স্কিমসহ সকল প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি এবং অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।'
Comments