তিস্তাপাড়ের ৩ হাজার নারীর আয়ের উৎস এখন পাটের বেণি

দেখতে চুলের বেণির মতোন। তৈরি পাট দিয়ে। তাই এর নাম পাটের বেণি। এই সাধারণ পণ্যটিই ভাগ্য বদলে দিয়েছে তিন হাজার নারীর।
বেণি তৈরির কাজ করছেন মধুরাম গ্রামের কয়েকজন নারী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

দেখতে চুলের বেণির মতোন। তৈরি পাট দিয়ে। তাই এর নাম পাটের বেণি। এই সাধারণ পণ্যটিই ভাগ্য বদলে দিয়েছে তিন হাজার নারীর।

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় তিস্তা তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়ন—রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ নদীভাঙনের শিকার। বন্যাপ্রবণ এই এলাকাটির অনেক বাসিন্দা বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে খাস জমি ও বাঁধের ওপর বসবাস করছেন। দারিদ্র ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।

কিন্তু বছর পাঁচেক আগে মধুরাম গ্রামের তুলসি রানী (২৭) নামের এক নারীর হাত ধরে পাটের বেণি বানানোর এই কাজে যুক্ত হতে শুরু করেন অন্য নারীরা; যে সংখ্যা এখন তিন হাজারে পৌঁছেছে।

এখান থেকে পাট দিয়ে তৈরি বেণি পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এই বেণি দিয়েই তৈরি করে ব্যাগ, পাপোশ ও শতরঞ্জির মতো বিভিন্ন পাটজাত পণ্য। তিস্তাপাড়ের নারীরা মোটা, মাঝারি ও চিকন—এই তিন ধরনের বেনি তৈরি করেন। প্রতি কেজি মোটা বেণি তৈরি করে তারা পান ২৪-৩০ টাকা, মাঝারি বেণিতে পান ৫০-৫৫ টাকা আর চিকন বেণির জন্য পান ৮০-৯০ টাকা পর্যন্ত। একেকজন গড়ে প্রতিদিন ৩-৪ কেজি বেণি তৈরি করতে পারেন। আর এর সবকিছু তারা করেন সাংসারিক কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে।

এই কাজের মূল উদ্যোক্তা তুলসি রানী। অন্য নারীদের তৈরি করা বেণি ওজন করে নিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

পাটের বেণি তৈরির কাজে যুক্ত করল্যা রানী জানালেন, এই কাজ করে তিনি প্রতিদিন ১০০-১৫০ টাকা আয় করেন, যা তার অভাবের সংসারে বেশ কাজে লাগে। এছাড়া এ আয়ের টাকা জমিয়েই তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

মিনা রানী নামের আরেক নারী বললেন, এই আয়টুকুর ব্যবস্থা না থাকলে তিনি তার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারতেন না।

নদীভাঙনে সব হারানো জান্নাতি বেগমও বললেন, এই এলাকায় তাদের অন্য কোনো কাজের সুযোগ নেই। তাই এখানকার বেশিরভাগ নারী পাটের বেণি তৈরির কাজ বেছে নিয়েছেন।

কথা হয় এই কাজের উদ্যোক্তা তুলসি রানীর সঙ্গে। জানান, ভাঙনকবলিত দরিদ্র পরিবারগুলোর কথা ভেবেই কাজটি শুরু করেছিলেন তিনি। বলেন, 'আমি ওজন করে নারীদের পাট সরবরাহ করি। নারীরা তা দিয়ে বেণি বানিয়ে আবার ওজন করে আমার কাছে জমা দেন। আমার মাধ্যমেই সেগুলো বিভিন্ন হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানে যায়।

এই কাজের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত পাট ওইসব প্রতিষ্ঠানই সরবরাহ করে বলেও জানান তুলসি রানি।

Comments

The Daily Star  | English

Need to mobilise youth power for new civilisation: Yunus at COP29

The chief adviser highlighted the fact that the climate crisis is intensifying

1h ago