পুলিশে সব ‘সুবিধা সিনিয়র অফিসারদের জন্য’

পুলিশ

তের বছর আগে মো. হালিম (ছদ্মনাম) পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।

এরপর থেকে তিনি ঢাকার বিভিন্ন থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৭ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতির জন্য তার নাম তালিকাভুক্ত করা হলেও ছয় বছর পরও তিনি সেই ডাকের অপেক্ষায় আছেন।

সম্প্রতি তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনে হচ্ছে কর্তৃপক্ষ আমাদের যোগ্য বলে মনে করে না। নইলে তারা আমাদের পদোন্নতি দিত।'

'সব সুবিধা সিনিয়রদের জন্য। ১০ থেকে ১২ বছর মাঠপর্যায়ে কাজ করার পরও কেন আমরা পদোন্নতি পাব না? এটা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য বিব্রতকর।'

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে এএসপি পদোন্নতির জন্য ৬৫৫ জন পরিদর্শক ও ১১৫ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) এবং ২০১৬ সালে ২৯১ জন পরিদর্শক ও ৭২ জন টিআই তালিকাভুক্ত করা হয়। এছাড়া ২০১২ ও ২০১৪ সালে পদোন্নতির জন্য অন্তত ৫১৫ জন পরিদর্শকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে যোগদান করা এই কর্মকর্তারা ২৫ থেকে ৩৩ বছর চাকরি করেছেন এবং শিগগির অবসরে যাবেন।

পদোন্নতি বিষয়ক এই সংকট সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন জুনিয়র কর্মকর্তারা।

জবাবে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, বর্তমানে এএসপির কোনো পদ খালি নেই।

২০২৮ সালের মধ্যে কিছু সংখ্যক এএসপি পদ শূন্য হলেও বিপুল সংখ্যক অপেক্ষমাণ কর্মকর্তার জন্য তা অপর্যাপ্ত।

সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে ৩০০ জন সুপারনিউমারারি (একই পদে অধিষ্ঠিত এবং পদোন্নতির পর একই দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা) এএসপি পদ সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে।

পরিদর্শক এবং এএসপি পদ উভয়ই গ্রেড নাইন। তাই কোনো অতিরিক্ত বেতনের প্রয়োজন হবে না।

ডেইলি স্টার ওই চিঠির একটি কপি পেয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা একাধিকবার সরকারের কাছে আমাদের দাবি জানিয়েছি। এটা আমাদের আইনগত দাবি এবং আমরা আশা করি সরকার শিগগিরই আমাদের দাবিগুলো সুরাহা করবে।'

প্রায় সাত বছর এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও ৩৫তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না হওয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠিতে ৩৫০টি অতিরিক্ত এসপি পদ সৃষ্টির অনুরোধ জানানো হয়েছে।

৩৫তম বিসিএসে প্রায় ১১৪ জন এএসপি রয়েছেন।

পাঁচ বছর পর এএসপিদের অতিরিক্ত এসপি পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা থাকলেও ৩৬তম বিসিএসের ১১৩ জন কর্মকর্তা এবং  ৩৭তম বিসিএসের ৯৭ জন কর্মকর্তা যথাক্রমে ছয় ও পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন। ৩৫তম ও ৩৬তম বিসিএস ব্যাচের পদোন্নতি ২০২৭ সাল এবং ৩৭তম বিসিএস ব্যাচের ২০৩০ সালের আগে হওয়া সম্ভব না।

এসব পদ সৃষ্টি করতে অতিরিক্ত ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

পদোন্নতির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন ৩৫ ও ৩৬তম বিসিএসের কর্মকর্তারা।

৩৫তম বিসিএস পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'পাঁচ বছর পর আমাদের পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সাত বছর চাকরি করার পরও আমরা তা পাচ্ছি না। ৩৫তম ও ৩৬তম বিসিএসের কর্মকর্তা যারা প্রশাসন, পররাষ্ট্র, এমনকি আনসারের মতো অন্যান্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন তারা অন্তত এক বছর আগে পদোন্নতি পেয়েছেন।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব (পুলিশ-১) আবুল ফজল মীর বলেন, 'সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি একটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। এজন্য জনপ্রশাসনসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে, তাই আবেদনের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।'

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশে প্রায় ৩ হাজার ১৪৬টি ক্যাডার পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন আইজিপি, দুজন অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১), ২০ জন অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২), ৮৭ জন ডিআইজি (গ্রেড-৩), ২০১ জন অতিরিক্ত ডিআইজি (গ্রেড-৪), ৫৯৬ জন এসপি (গ্রেড-৫), ১ হাজার ৮ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রেড-৬) এবং ১ হাজার ২৩১ জন এএসপি (গ্রেড-৯) রয়েছেন।

গত বছর আইজি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি এবং এসপি পদোন্নতির জন্য ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ চেয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর।

কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ধরনের ৩৪২টি পদ সৃষ্টি করায় পুলিশে অসন্তোষ দেখা দেয়।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বেশি পদের জন্য আবেদন করলে ২৩ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আটটি অতিরিক্ত আইজিপি ও ১৫ টি ডিআইজি পদের অনুমোদন দেয়।

Comments

The Daily Star  | English
CSA to be repealed

Govt will scrap CSA within a week

The Cyber Security Act will be repealed within a week and all cases filed under the act will be withdrawn, Nahid Islam, adviser to the posts, telecommunications, and information technology ministry, said yesterday.

9m ago