সাদিক অ্যাগ্রোর সাভারের খামারে আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১২ গরু

সাভারের ভাকুর্তায় সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে অভিযানে ১২টি ব্রাহমা জাতের গরু পেয়েছে দুদক। ছবি: স্টার

তিন বছর আগে অবৈধভাবে ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। সরকার সেগুলো জব্দের পর পরিচর্যার জন্য সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখে।

সম্প্রতি সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে অনিয়মের আরও কিছু অভিযোগ ওঠায় আজ সোমবার সাভারের সরকারি খামারে (ডেইরি ফার্ম) ও সাভারের ভাকুর্তায় সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অভিযানে ভাকুর্তার খামারে বাছুরসহ ১২টি ব্রাহমা জাতের গরু পাওয়া যায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে ডেইরি ফার্মে লালনপালনে দেওয়া ব্রাহমা জাতের গরুগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে দুপুরে ডেইরি ফার্মে অভিযান চালায় দুদকের ৯ সদস্যের দল।

অভিযোগ আছে, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে দেওয়া ব্রাহমা জাতের গরুগুলো দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে নিয়ে নেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন।

গরুগুলো জবাই করে রোজার মাসে ২৮০ টাকা মূল্যে মাংস বিক্রির শর্তে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের নামে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন ইমরান।

কিন্তু, ইমরান সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রি না করে গরুগুলো তার নিজের খামারে রেখে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া, আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে সংগ্রহ করে কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে তোলেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, '২০২১ সালে অবৈধভাবে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি হয়। সেগুলো এতদিন পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। তবে গত রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরু জবাই করে বিক্রির জন্য সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন দায়িত্ব নেন।'

'কিন্ত কোরবানি ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া গরুগুলো তিনি জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করেছেন কিনা, খতিয়ে দেখতে এই অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে এখানকার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কিনা, তাও দেখা হচ্ছে,' বলেন তিনি।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু জব্দ করে ঢাকা কাস্টমস হাউস। সেই গরুগুলোর দুটি বাছুর ডেইরি ফার্মে লালন পালন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জব্দকৃত ১৮টি গরুর একটি গরু বিমানবন্দরেই মারা যায়। বাকি ১৭টি গরু আমাদের লালন পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমাদের কাছে দুটি গরু মারা যায়। এছাড়া চারটি গরু বাছুর জন্ম দেয়। সেই বাছুরগুলোর মধ্যে দুটি বাছুর মারা গেছে। দুটি এখানে লালন পালন করা হচ্ছে।'

'১৫টি গরু গত রমজান মাসে সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির শর্তে মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ছাড় করিয়ে নেয় ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ওই সংগঠনের সভাপতি,' বলেন তিনি।

গরুগুলো জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, 'আসলে সে বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের ছিল না। উনারা নথি দিয়েছেন। আমরা নথি অনুসারে গরুগুলো তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি।'

ভাকুর্তার খামারে অভিযান

দুদকের একই তদন্ত দল সাভারের ভাকুর্তা এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর আরেকটি খামারে অভিযান চালিয়েছে। সেই খামারে বাছুরসহ ১২টি ব্রাহমা জাতের গরুর সন্ধান পেয়েছে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'এখানে আসার পর একটি শেডে পাঁচটি বাহ্রামা জাতের গাভি ও সাতটি ব্রাহমা বাছুরের সন্ধান পেয়েছি। এ সময় কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা একটি ছোট ঘরে ১৫ লাখ টাকা দামের আলোচিত সেই ছাগলটিও পাওয়া গেছে।'

'ব্রাহমা জাতের গরু যেহেতু আমদানি নিষিদ্ধ, সেক্ষেত্রে গরুগুলো কীভাবে খামারে এল সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানতে চাইবে,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পর সরকার ২০১৬ সালে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

Comments

The Daily Star  | English

How a 'Dervish Baba' conjured crores from a retired nurse

Want to earn easy money? Just find someone who thinks their partner is cheating on them, then claim to be a “Genie King” or “Dervish Baba,” and offer solutions to “relationship problems” for a fee

5h ago