এয়ারবাস উড়োজাহাজ কিনতে বিমানের ইউ-টার্ন

এয়ারবাস উড়োজাহাজ কিনতে বিমানের ইউ-টার্ন

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গত জানুয়ারিতে দেখতে পায়, দুটি এয়ারবাস এ৩৫০ উড়োজাহাজ কিনলে তাদের বড় ধরনের লোকসান হবে।

এরপর গত ২২ এপ্রিল একটি নতুন কমিটিকে বিষয়টি মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং মাত্র তিন দিনের মধ্যে নতুন কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনা লাভজনক হবে।

এমনকি নতুন এই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে বিমান বোর্ড চারটি এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনার অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে, যার প্রতিটির দাম প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার।

গত বছরজুড়ে একাধিক অনুষ্ঠানে এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনার কথা বলেছে বাংলাদেশ।

এই কারিগরি-আর্থিক মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করছিল চূড়ান্ত সমঝোতা স্মারক, যেখানে প্রতিটি উড়োজাহাজের জন্য অফেরতযোগ্য পাঁচ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি ফি দিতে হবে।

আগের কমিটি ছয় মাস ধরে একটি প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনা হলে এর জন্য বিমানকে ২৫ বছরে (উড়োজাহাজের জীবনকাল) ৪৬৩ দশমিক শূন্য ৮ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নগদ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।

এর পাঁচ মাস পর বিমান বোর্ড মূল্যায়ন কমিটি পুনর্গঠন করে এবং কমিটির সাবেক প্রধান ও বিমানের প্রকৌশল পরিচালককে পরিবর্তন করে। বোর্ড সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, নতুন কমিটিকে মূল্যায়নের জন্য তিন দিন সময় দেওয়া হয়।

নতুন কমিটি গত ২৫ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়—যেখানে বলা হয়েছে, দুটি এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনা লাভজনক হবে। সম্পূর্ণ বিপরীত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এমন একটি কেবিন ফ্যাক্টরের ওপর ভিত্তি করে, যা বিমান কখনো অর্জন করতে পারেনি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এটি লাভজনক হবে, যদি কেবিন ফ্যাক্টর ৯২ শতাংশ হয়।

কেবিন ফ্যাক্টর বলতে বোঝায়, গড়ে ফ্লাইটের কত শতাংশ আসন পূরণ করা হয়েছে।

এর মাধ্যমে নতুন কমিটি আগের কমিটির মূল্যায়নের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি আয় দেখিয়েছে।

এ ছাড়া, নতুন কমিটি বলছে, এয়ারবাস উড়োজাহাজগুলো শুধু দুটি রুটে লাভজনক হবে—যার মধ্যে একটি হলো ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর।

২০০৬ সালে পরিচালন কার্যক্রমে অনিয়ম খুঁজে পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে ক্যাটাগরি-২ এ ফেলেছে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি। এর ফলে, বিমান এখন পর্যন্ত এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে না।

নতুন মূল্যায়নে জেট ফুয়েল খরচ কম হওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আয় প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেশি দেখানো হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে জেট ফুয়েলের দাম ঐতিহাসিকভাবেই অস্থির। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মহামারির পর জেট ফুয়েলের দাম আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে।

প্রথম কারিগরি-আর্থিক মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, আর্থিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে দুটি এ৩৫০-৯০০ উড়োজাহাজ আগামী ২৫ বছরে আর্থিকভাবে টেকসই নয়। কারণ এর নিট বর্তমান মূল্য 'নেগেটিভ'।

নিট বর্তমান মূল্যে দেখানো হয়, কোনো বিনিয়োগ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাভজনক হবে কি না। সেইসঙ্গে এতে ভবিষ্যতের সব নগদ লেনদেন হিসাব করা হয়।

নতুন কমিটি অবশ্য দ্বিতীয় বছর থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিচালন মুনাফা হবে বলে দেখিয়েছে।

তবে প্রথম কমিটি বলছে, ব্যয়ের তুলনায় আয় কম হবে।

'এতে অপ্রতুল সরঞ্জাম এবং বিমানের এয়ারবাসের বহর ছোট হওয়ার কারণে অতিরিক্ত ইঞ্জিন, খুচরা যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম সরবরাহ, ককপিট ক্রু ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য সেটআপ বা ট্রানজিশন খরচের জন্য বিশাল অংকের প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে।'

এ ছাড়া, সুদ অনেক বেশি বলে জানানো হয়েছে প্রথম প্রতিবেদনে।

দ্বিতীয় কমিটি বলছে, ইস্তাম্বুলে স্টপওভার দিয়ে সপ্তাহে তিনবার ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে এবং দৈনিক ঢাকা-জেদ্দা রুটে এয়ারবাস এ৩৫০ পরিচালনা করে ২৫ বছরে ১৩৫ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার লাভ করা যাবে।

প্রথম কমিটির মূল্যায়নে উঠে এসেছে, এই রুটগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা করলে ২৫ বছরে ১৮৮ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার লোকসান করবে বিমান।

দ্বিতীয় কারিগরি-আর্থিক কমিটি এই উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-সিঙ্গাপুর বা ঢাকা-রোমের মতো অন্যান্য রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকে লাভজনক বলে মনে করেনি। উভয় কমিটিই মনে করছে, এই উড়োজাহাজগুলোর জীবনকালে এই রুটগুলো থেকে ২৪৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার থেকে ৪৬৩ দশমিক শূন্য ৮ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত লোকসান হতে পারে।

সংশোধিত আর্থিক প্রাক্কলনে ধারণার ভিত্তিতে মুনাফা হিসাব করা হয়েছে—২০২৬ সালে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে কেবিন ফ্যাক্টর হবে ৭৮ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে তা হবে ৯০ শতাংশ।

একইভাবে এতে প্রাক্কলন করা হয়েছে যে ২০২৬ সালে ঢাকা-জেদ্দা রুটে কেবিন ফ্যাক্টর হবে ৮৫ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে হবে ৯২ শতাংশ।

গত বছর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বিমানের গড় কেবিন ফ্যাক্টর ছিল প্রায় ৭৬ শতাংশ। বিমানের অভ্যন্তরীণরা বলছেন, বিমান সাধারণত উচ্চ চাহিদা রয়েছে এমন রুটেই ফ্লাইট পরিচালনা করে। সেই হিসাবে এই কেবিন ফ্যাক্টর তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

দ্বিতীয় কমিটি তাদের প্রাক্কলনকে 'আশাবাদী, কিন্তু অর্জনযোগ্য' বলে অভিহিত করেছে।

বিমানের বোর্ড সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, দ্বিতীয় কমিটি বিমানের ৩০৫তম বোর্ড সভায় প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর দাম নিয়ে আলোচনার জন্য বোর্ড আরেকটি কমিটি গঠন করে, সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয় এবং উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে।

চলতি মাসে বিমান চলাচল সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপন করা বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে মূল ব্যবসা ফ্লাইট অপারেশনে বিমানের লোকসান ২৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

নতুন যুক্ত হওয়া টোকিও, রোম ও গুয়াংজুসহ ২২টি আন্তর্জাতিক রুটের প্রায় প্রতিটিতেই লোকসান করছে বিমান।

বিমানের অভ্যন্তরীণরা জানান, শুধু জেদ্দা, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর রুট থেকে লাভ হচ্ছে বিমানের।

বিমান লাভজনক হচ্ছে মূলত অন্যান্য খাতের আয় থেকে। এর মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং, ক্যাটারিং এবং বিমান পোল্ট্রি কমপ্লেক্স।

উভয় মূল্যায়ন কমিটি উল্লেখ করেছে, বোয়িংভিত্তিক বহর থেকে মিশ্র বহরে যেতে বেশ মোটা অংকের খরচের প্রয়োজন হবে।

এ বাবদ ৮০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা করছে বিমান। যদিও এয়ারবাসের প্রতিদ্বন্দ্বী বোয়িং বলছে, এই খরচ দাঁড়াবে ১৪৬ মিলিয়ন ডলারে।

এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনার জন্য সুপারিশকারী দ্বিতীয় কমিটি বলেছে, বিমান ইতোমধ্যেই প্রতিটি ফ্লাইটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রু ঘাটতিতে রয়েছে। নতুন ধরনের উড়োজাহাজের জন্য পাইলটদের নতুন সেটআপ প্রয়োজন হবে, বিশেষ করে এ৩৫০ এর জন্য। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দেওয়া পর্যন্ত বর্তমান বহরের ক্রুদের কখনই এয়ারবাসে কাজে লাগানো যাবে না। এয়ারবাস উড়োজাহাজ ওড়ানোর জন্য বর্তমান বহর থেকে ক্রুদের নিতে হলে বিমানকে বিভিন্ন রুটে অপারেশন স্থগিত করতে হবে কিংবা ফ্লাইট সংখ্যা কমাতে হবে।

কমিটি আরও বলছে, নতুন ক্রু নিয়োগ দেওয়া হলেও এই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ ফ্লাইট পরিচালনায় অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের কোনো সহজ ও সংক্ষিপ্ত উপায় নেই।

এয়ারবাস এয়ারক্রাফট চালুর আগে বিমানকে দুই বছর পর্যন্ত প্রকৌশলী ও মেকানিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলে জানিয়েছে দ্বিতীয় কমিটি। যখন তারা প্রশিক্ষণে থাকবেন, তখন তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে বিমানের বাকি সব স্টেশনে প্রকৌশল ও যান্ত্রিক সেবা দিতে হবে।

প্রতিবেদন বলছে, বহরে মাত্র দুটি এয়ারবাস উড়োজাহাজের খুচরা ইঞ্জিন ও খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য ৬১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

এই বিশাল খরচ পুষিয়ে নেওয়ার জন্য এবং এত কিছুর পরও লাভ দেখানোর জন্য দ্বিতীয় কমিটিকে এই ক্রয় পরিকল্পনাকে 'আশাবাদী' প্রকল্প বলে উল্লেখ করতে হয়েছে।

এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনার জন্য ৮০-৮৫ শতাংশ অর্থায়ন হবে একটি রপ্তানি ক্রেডিট এজেন্সি থেকে স্বল্প সুদে ঋণের মাধ্যমে। বিমানকে বাকি টাকা সংগ্রহ করতে হতে পারে উচ্চ সুদের বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে।

২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিমান পাঁচটি উড়োজাহাজ কিনেছে। সেই সময়ে বিমানকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছিল।

আটটি এয়ারবাস এ৩৫০এস এবং দুটি কার্গো উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে গত বছরের ৫ মে লন্ডনে যৌথ স্মারক সই করেন যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্য বিভাগের প্রতিমন্ত্রী লর্ড ডমিনিক জনসন এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছিলেন, বাংলাদেশ ১০টি এয়ারবাস উড়োজাহাজ কিনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অথচ এর সবই ঘটেছিল এয়ারবাস কেনার বিষয়ে কার্যকারিতা সমীক্ষা সম্পন্ন করার আগেই। এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথম কারিগরি-আর্থিক কমিটি গঠন করা হয়।

গত বছরের ৩ মে বিমান বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের পরই উড়োজাহাজ কেনা যাবে। সেখানে বোর্ড কোনো নির্দিষ্ট উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর জোর দেয়নি। সেখানে বলা হয়, বিমান আটটি পর্যন্ত রোলস-রয়েস চালিত এ৩৫০-৯০০/১০০০ কিংবা চাহিদা মতো অন্য কোনো উপযুক্ত উড়োজাহাজ কিনতে পারে।

এই বোর্ড সভার দুদিন পর এয়ারবাস কেনার যৌথ স্মারক সই হয়।

দ্বিতীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারিগরি-আর্থিক কমিটিকে শুধু এয়ারবাসের উড়োজাহাজের প্রস্তাব মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে এই কমিটি অন্যান্য নির্মাতাদের উড়োজাহাজের সঙ্গে এ৩৫০ বা এ৩৩০ উড়োজাহাজের তুলনা করতে পারেনি।

চলতি মাসে ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বোয়িংয়ের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্যিক বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রায়ান উইয়ার জানান, বোয়িংয়ের একটি প্রস্তাব বিমানের টেবিলে রয়েছে, যা এখনো মূল্যায়ন করা হয়নি।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এখন এয়ারবাসের প্রস্তাব মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এটি একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছে গেলে বোয়িংয়ের প্রস্তাবও মূল্যায়ন করব। কারণ আমরা নিশ্চিত করব যে প্রতিযোগিতামূলক দরেই ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে।'

এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনার জন্য দাম নিয়ে আলোচনার জন্য কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই কমিটি এখনো তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago