কিরগিজস্তানে আতঙ্কিত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে গত ১৭-১৮ মে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় অন্তত ২৮ জন আহত হয়। পরে শহরজুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত অবস্থায় সেখানে দিন পার করছেন। চার্টার্ড ফ্লাইটের অপেক্ষায় না থেকে, তারা ইতোমধ্যে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

কিরগিজস্থানে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ডা. জেরিত ইসলাম আজ সোমবার বিকেলে হোয়াটসঅ্যাপে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান।

কিরগিজস্থানে এমবিবিএস শেষ করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনরত ডা. জেরিত ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। অনেকেই বেশ বিচলিত, আমরা তাদের নিরাপত্তা দিয়ে বাসে করে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছি।'

'এখন পর্যন্ত ২০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেশে পাঠানো হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গতকাল আমরা দুজনকে দেশে পাঠিয়েছি। আজ আমরা ১৬ জনকে পাঠাচ্ছি।'চার্টার্ড ফ্লাইটে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জেরিত বলেন, 'চার্টার্ড ফ্লাইটের জন্য ২৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা 'সব শিক্ষার্থীরা এখন নিরাপদে আছেন' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'হোস্টেলে সবাই নিরাপদে আছেন। যারা ফ্ল্যাটে থাকেন তাদেরও নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।'

বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন আর কেউ আক্রমণ করছে না আমাদের। তবে একটা ভীতি সবার মধ্যে আছে যে, হয়ত আমাকে কেউ অ্যাটাক করতে পারে।'

'এখান থেকে এখন সব বিদেশি শিক্ষার্থীরাই নিজ নিজ দেশে চলে যাচ্ছে,' যোগ করেন ডা. জেরিত।    

নিরাপত্তা নিয়ে এতটা চিন্তিত যে, তারা এখানে থাকতেই চাইছে না। চার্টার্ড ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা না করে, যারা চলে যেতে চাইছে তাদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি।'

গত ১৩ মে বিশকেকে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশরীয় শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। পরে মিশরীয় শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের মারধর করে। কয়েকদিন পর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই ভিডিও দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে সব বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালায় স্থানীয়রা।

কিরগিজস্তানের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের সবাই মেডিকেল শিক্ষার্থী।

কঠোর হুঁশিয়ারি কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্টের

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় জড়িতদের এবং এর পেছনে ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারভ।

সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলাকারীদের আটক করেছে এবং ঘটনার বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করেছে।

হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারভ বলেন, 'একটা অংশের উস্কানিতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা এমন এক ঘটনা ঘটিয়েছে যা দেখে পুরো দেশ হতবাক। ১৩ মে'র ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও ভিডিও যাচাই না করেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরিণতি আমরা সবাই দেখলাম।'

তিনি বলেন, 'আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারত এবং প্রকৃত ঘটনা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে পারত, তাহলে হয়ত এসব ঘটত না।'

'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অপরাধীদের আটক করেছে এবং তদন্ত করছে,' বলেন তিনি।

একটা গোষ্ঠী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট সাদির।

তিনি বলেন, 'সব ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। আমি সরাসরি বলতে চাই যে, যারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে সমর্থন করে না, তারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে এই ধরনের উস্কানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে।'

'আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্রও বহন করছিল,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই স্থিতিশীল করতে আদেশ দিয়েছি। আর যদি কোনো লুটপাট, পুলিশের ওপর হামলা বা ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।'

কিরগিজস্থানের নাগরিকদের ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যেকোনো তথ্য বা ভিডিও যথাযথ যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন করতে এবং কোনো ধরনের উস্কানির ফাঁদে না পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সাদির।

 

Comments

The Daily Star  | English

Admin officers protest plan for more non-admin deputy secretaries

Non-admin officers announce strike tomorrow, demanding exam-based promotions

1h ago