উন্নত দেশসহ এমন কোনো দেশ নেই যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হয় না: শাজাহান খান
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি, সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা যায় কিন্তু বন্ধ করা যায় না। সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে এ কথা যারা মনে করেন তারা আসলে আহম্মকের স্বর্গে বাস করছেন।
আজ শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ফরিদপুর নতুন বাস টার্মিনালে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শাজাহান খান বলেন, 'আমরা সরকারের কাছে ১১১টি সুপারিশ করেছি এ সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। দুর্ঘটনা বন্ধ করা যায় না। উন্নত দেশসহ এমন কোনো দেশ নেই যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হয় না। তবে দুর্ঘটনার দিক থেকে আমরা মধ্যমস্তরের দেশ হিসেবে রয়েছি।'
সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহজাহান খান বলেন, 'দুর্ঘটনা ঘটলেই সাংবাদিক বন্ধুরা বলে দেন, বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা (সাংবাদিক) কি গবেষণা করে দেখেছে যে দুর্ঘটনা কেন ঘটেছে? আমি চাই সাংবাদিকরা সত্য কথা তুলে ধরুক।'
'শিবচরে যে গাড়িটির দুর্ঘটনা ঘটল, সেটা নিয়ে বলে দেয়া হলো- বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেল, ওই গাড়িটির সামনের চাকা বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং সড়কের বেরিয়ার দুর্বল ছিল। সুতরাং আমি সাংবাদিকদের অনুরোধ করব, দুর্ঘটনা ঘটলেই যেন বলা না হয়- এটা বেপরোয়া গতি। প্রথমদিকে এমন মন্তব্য করা ক্ষতিকর, মানুষের মাঝে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে,' বলেন তিনি।
শাজাহান খান বলেন, 'মিশুক মুনীরের মৃত্যুর পর আমরা গবেষণা করে দেখেছি ওই দুর্ঘটনার জন্য ড্রাইভার বা গাড়ি দায়ী ছিল না। অথচ একটি ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে এ দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালক দায়ী।'
'দুর্ঘটনা ঘটলেই ড্রাইভারের ওপর দোষ চাপাবেন না। আমি মানছি অনেক চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। তবে সবক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটে না। যে ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয় সে ক্ষেত্রে এ মন্তব্য আসলেই ক্ষতিকর এবং তা মানুষের মাঝে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে,' বলেন তিনি।
চালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনাদের বুঝতে হবে শিল্পপতি, এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যানের মতো আপনারাও সম্মানিত ব্যক্তি। অন্যকে সম্মান দেবেন আপনারাও সম্মান পাবেন। মনে রাখবেন আমাদের দ্বারা কোনো মানুষ যেন অসম্মানিত না হয়।'
'আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদসহ সব দল মিলে শ্রমিক ফেডারেশন গঠিত। শ্রমিক ফেডারেশন একক কোনো দলের নয়। আমাদের স্লোগান 'দল যার যার, শ্রমিক ফেডারেশন এক কাতার'। আমরা যদি সড়ক যোগাযোগে দুর্ঘটনা হ্রাস করতে না পারি, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারি তাহলে আমাদের অনেক বিপর্যয় হবে,' বলেন তিনি।
শাজাহান খান আরও বলেন, 'পরিবহন সেক্টর একটি সেবামূলক খাত। ড্রাইভাররা খানসেনাও নয়, ঘাতকও নয় তারা আপনাদের সেবক। তারা গাড়ি না চালালে আপনারা চলাফেরা করতে পারবেন না। আপনারা তাদের সম্মান দেবেন তারা আপনাদের সম্মান দেবে।'
পাশাপাশি তিনি চালক ও মালিক সমিতিগুলোকে অনুরোধ করে বলেন, 'আমরা যদি দুর্ঘটনা ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারি, আমাদের অনেক বিপদ হবে। সুতরাং কোনো ড্রাইভারের কারণে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে।'
বর্তমানে দুর্ঘটনায় বড় অংকের জরিমানা হয়না উল্লেখ করে সরকারের প্রশংসা করে শাহজাহান খান বলেন, 'আগে দুর্ঘটনায় পড়লে, হাইকোর্টে মামলা হলে কোটি কোটি টাকা জরিমানা করা হতো। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের মালিককে চার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল, ড্রাইভারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি দুর্ঘটনায় তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে পরিবহন মালিক সমিতি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একট বক্তব্যের পরে আর কোনো মোটা অংকের জরিমানা করা হয়নি।'
এ অনুষ্ঠানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা উসমান আলী অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন না করার দাবি জানান। তিনি বলেন, 'আজ অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন খড়গ হিসেবে শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই কিন্তু শ্রমিকদের দাবিয়ে রাখার জন্য এই আইন সংসদে নিয়ে আসা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রমিক সুরক্ষা আইন না হবে ততক্ষণ এই আইন পাশ করতে দেয়া হবে না।'
পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, 'সংসদে নতুন করে এই আইন তোলা হলে সেদিন থেকেই গাড়ির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে, একটি গাড়ির চাকাও ঘুরবে না।'
সভায় ফরিদপুর মটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জুবায়ের জাকিরের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক, মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মো. নাসিরসহ আরও অনেকে।
Comments