বাইরে তীব্র গরম, ঘরেও নেই স্বস্তি

বাইরে গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত আর ঘরেও গরমে টেকা দায় বলছেন নগরের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ছবি: আনিসুর রহমান/ স্টার

সূর্য কিছুটা হেলে গরম সামান্য কমলেও রাজধানীর কড়াইল বস্তির টিনের ঘরগুলো তখনও যেন একেকটা গরম চুলার মতো।

এমন একটি ঘরে কথা হয় আসমা আক্তারের সঙ্গে। জামাকাপড় ঘামে ভেজা। কপালের ঘাম মুছে বলেন, 'মনে হয় সবসময় আগুন জ্বলতাছে, ঘরের দেয়াল ধরলেও মনে হয় হাত পুইড়া যাইবো।'

রান্নাঘরে ঢুকলে মনে হয় নরকে পা রেখেছেন। চুলার তাপের সাথে বাইরের গরম বাতাস মিলে আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে।

'মনে হয় গরমে আমার পুরা শরীর জ্বলতেছে,' বলেন আসমা।

জানান, তীব্র গরমে গত এক সপ্তাহ জ্বর আর মাথা ব্যথায় ভুগেছেন তিনি।

তীব্র তাপদাহে শহরের অন্যান্য বস্তিবাসীর জীবনও আসমার মতোই।

তবে টিনশেড বস্তির ছোট ঘর, আর একই জায়গায় অনেক মানুষের বসবাস এই গরমে তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।

আসমা, তার স্বামী, দুই সন্তান এবং এক ভাই গত পাঁচ বছর ধরে সবাই একটা ঘরেই বাস করছেন। 'ঘরে আর কোনো জায়গাই নাই। একটা বিছানায় আমরা সবাই ঘুমাই, একটা ফ্যান। বাচ্চারা ফ্যানের কাছাকাছি ঘুমায় একটু বাতাসের জন্য। তবে আমরা কেউই গরমে রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারি না,' বলছিলেন আসমা।

কড়াইল বস্তির ফাতেমা আক্তারের অবস্থাও আসমার মতোই।

'রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না বলে সকালে আমার স্বামী ঠিকমতো দিনমজুরের কাজে যেতে পারে না। ৩-৪ ঘণ্টা কাজ করার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে।'

রিকশাচালক জামাল হোসেন বলেন, প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে বস্তিতে কোনো খোলা জায়গা বা কোনো গাছপালাও নেই।

রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল, সাততলা, ধামাল কোর্ট, আবুলের গলি, বেনারসি পল্লী ও মিরপুরের কালভার্ট বস্তি ঘুরে দেখেন ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকেরা।

কড়াইল বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষ রাস্তায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। অনেক নারী যাদের বস্তিতে খাবার পানি কেনার সামর্থ্য নেই তারা বহু দূরে দূরে যাচ্ছেন পানির খোঁজে।

বস্তিবাসীরা বলেন, চলতি মাসে গরমে আগের সব রেকর্ড ভাঙলেও স্থানীয় প্রতিনিধি বা সরকারি সংস্থার কাছ থেকে তারা কোনো সহায়তা পাননি।

মিরপুরের ভাষানটেক বস্তি এলাকায় বেনারসি পল্লী, ধামাল কোর্ট এবং আবুলের গলির অবস্থাও দুর্বিষহ।

বেনারসি পল্লী বস্তির বাসিন্দা ও গৃহকর্মী রুবিনা আক্তার (৬০) বলেন, ছোট এই ঘরে আমাদের সবার জন্য একটা ছোট ফ্যান আছে কেবল।

তীব্র গরমের কারণে আমার দুই আত্মীয় বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, বলেন রুবিনা।

তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে সকাল ৬টা থেকে রাত ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করেছে। এই সময়টা ঘরে থাকার উপায় ছিল না।

একই বস্তির আরেক গৃহকর্মী মর্জিনা বেগম (৫৩) জানান, গরমের কারণে নিয়মিত যেতে না পারায় চার বাড়ির মধ্যে তিন বাড়ি থেকেই তিনি কাজ হারিয়েছেন।

'তীব্র গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজে যেতে পারি নাই। এখন কাজ হারানোর পর পরিবার কেমন করে চলবে সেই চিন্তায় আছি,' বলেন মর্জিনা।

এদিকে, তীব্র গরমে মিরপুরের আবুলের গলি বস্তির অনেকে পাশের কবরস্থানে যেখানে অনেক গাছ ও খোলা জায়গা আছে সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

বিদ্যুতের লাইনে কম ভোল্টেজের কারণে ফ্যান ধীরে ঘোরে বলে অভিযোগ করেন তারা।

আবুলের গলি বস্তির বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৫৫) বলেন, 'এই গরমে ঘরে থাকা যায় না। গরম, লোডশেডিং সব মিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা। গতকাল এই কবরস্থানেই ছিলাম ভোর ৪টা পর্যন্ত।'

আলামিন হোসেন (৩৩) নামে এক বিক্রেতা জানান, অতিরিক্ত গরমে তিনি সারা রাত জেগে থাকেন। ভোরে কিছুটা গরম কমলে তখন ঘুমান।

ধামাল কোর্টের বাসিন্দা শামসুজ্জামান মজুমদারও (৫১) একই কথা বলেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, টিনের ঘর তাপ শোষণ করে সহজেই গরম হয়ে যায়। তিনি এই সমস্যা সমাধানের জন্য বস্তির আবাসন সামগ্রী সম্পর্কে সরকারি নির্দেশিকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

'প্রতিনিধি এবং সরকারি সংস্থাগুলো বস্তিবাসীদের প্রতি উদাসীন কারণ তারা অস্থায়ী বসতি স্থাপনকারী হিসাবে বিবেচিত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই মানসিকতা পরিবর্তন করা এবং এই তাপপ্রবাহের সময় বস্তিবাসীদের সাহায্য করার জন্য কাজ করা, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh exports to EU

RMG exports to EU rise by 2.99% in Jan-Nov

In the 11 months, Bangladesh shipped garments worth $18.15 billion, second highest after China

1h ago