বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

কারখানার শ্রমিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজের পর কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ ঈদের আগে বোনাস পেলেও মার্চের বেতন বকেয়া ছিল৷
শ্রমিক বিক্ষোভ
বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের শ্রমিকদের বিক্ষোভ৷ ছবি: স্টার

গত মার্চের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের হাজারো শ্রমিক৷

আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি, বাঁশ ও কাঠ ফেলে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা৷ এতে সড়কটিকে অন্তত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্প পুলিশ ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশকে সড়কে দেখা গেছে৷ তবে সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যায়নি৷

এদিকে, কারখানা তিন দিন বন্ধ ঘোষণা করছে মালিকপক্ষ৷

এর আগে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করেন৷

কারখানার শ্রমিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজের পর কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ ঈদের আগে বোনাস পেলেও মার্চের বেতন বকেয়া ছিল৷

কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মার্চের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা পাননি৷ এতে ঈদের মধ্যে অর্থ সংকটে দিন কাটিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন শ্রমিকরা৷

ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী এ পোশাক কারখানাটিতে অন্তত সাত হাজার শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ৷

কারখানাটির সুইং অপারেটর মো. মাসুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপ্রিলের ৮ তারিখ কারখানা বন্ধের সময় মোবাইলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেনি মালিকপক্ষ৷ গত ৮ মাস ধরে বেতন নিয়ে এভাবে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ৷ বেতনের দাবিতে রাস্তায় না নামলে শ্রমিকরা বেতন পান না।'

'ঈদের দিনও বারবার মোবাইল চেক করেছি৷ এই মনে হয় বেতন ঢুকলো এই আশায়৷ কিন্তু বেতন আসেনি৷ আপনারা ভাবতেও পারবেন না ঈদের সময় বেতন না পেলে কীভাবে শ্রমিকদের দিন কাটে৷ এবার ঈদে আনন্দ ছিল না৷ অন্তত অর্ধেক বেতন দিলেও তো হতো,' যোগ করেন তিনি।

ঈদের আগে বেতন না পাওয়াতে গ্রামে যেতে পারেননি বলে জানান কারখানার শ্রমিক সুমাইয়া৷ 'বাসের টিকেট কেটেও সিরাজগঞ্জে বাড়ি যেতে পারিনি,' বলেন তিনি৷

'আমাদের ক্রোনীর শ্রমিকদের ঈদ বা উৎসব নাই৷ প্রতি মাসে বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে হয়৷ বাসের টিকেট কেটেও গ্রামের বাড়ি যেতে পারি নাই৷ টাকা নাই, বাড়ি গিয়ে কী করবো? আমাদের ঈদের আনন্দ শেষ করে দিয়েছে ক্রোনীর মালিক৷'

'আমরা কী মানুষ না অন্য কিছু?' বলেন সুমাইয়া৷

ঘটনাস্থলে থাকা ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তছলিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকরা মার্চের বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন৷ তারা কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করছেন না৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কাজ করছে৷'

'অবরোধের কারণে অন্তত দুই কিলোমিটার যানজট দেখা দিয়েছে৷ শ্রমিকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছি৷ সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের আগে সব শ্রমিককে বোনাস দিয়েছি। শিপমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় মার্চের বেতনটা দিতে পারিনি৷ আমরা আগামী বুধবারের মধ্যে সবার বেতন পরিশোধ করে দেব।'

Comments