চাঁদপুর

গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ‘নিখোঁজ’

নিখোঁজ চাঁদপুর শহরের পূবালী ব্যাংক নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী। ছবি: সংগৃহীত

গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে সপরিবারে 'নিখোঁজ' চাঁদপুর শহরের পূবালী ব্যাংক নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকটির আঞ্চলিক কার্যালয় ও ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের দুটি পৃথক তদন্ত দল কাজ শুরু করেছে।

শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজের বিষয়ে নতুন বাজার শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজের খবরে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই পূবালী ব্যাংকের ওই শাখায় গ্রাহকরা ভিড় করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যাংকের গ্রাহকদের কেউ এফডিআর তুলতে আবার কেউ অ্যাকাউন্টে টাকা আছে কি না, সেই খোঁজ করতে এসেছিলেন।

মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা ও পদ্মা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তাদের দেখা গেছে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করতে। তারা বলছেন, তাদের ১ কোটি টাকার বেশি পে-অর্ডারের টাকার কোনো খবর নেই।

চাঁদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওকে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাউছার হোসেনের পক্ষে জাহিদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শ্রীকান্ত নন্দীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। খুবই ভালো সম্পর্ক হওয়ার সুবাদে ঈদের আগে তারা শ্রীকান্তকে তাদের প্রতিষ্ঠানের কাজে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬২ টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে বলেন।

কিন্তু শ্রীকান্ত ওই টাকা উত্তোলন করে ওকে এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে ৪ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন জাহিদ।

পূবালী ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন লিটন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের আগে ম্যানেজার শ্রীকান্ত আমার কাছ থেকে ধার চাইলে আমি তাকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেই। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে উধাও হয়ে গেছেন।'

এ ঘটনায় তিনি ১৩ এপ্রিল চাঁদপুর সদর মডেল থানায় জিডি করেছেন বলে জানান।

কচুয়া উপজেলার আশরাফুর এলাকার দলিল লেখক মো. মারুফ বলেন, 'আমাকে বেশি লাভ দেবেন বলে ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী ৭৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। এখন তিনি নিখোঁজ।'

এসব বিষয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে মো. হুমায়ুন কবিরকে ওই শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দেয়।

জানতে চাইলে মো. হুমায়ুন কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রীকান্ত নন্দী গত ১৪ জানুয়ারি এ শাখায় যোগদান করেন। যোগদানের ৩ মাসের ভেতর এই ব্যাংকে কী ঘটেছে, তা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। তবে গত ৪ এপ্রিল বিকেল ৩টার পর থেকে শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজ উল্লেখ করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় জিডি করেছি।'

'তার বিষয়টি বর্তমানে আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও হেড অফিস দেখছে,' বলেন তিনি।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংক কুমিল্লার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এখনো কোনো গ্রাহকের লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমাদের অভ্যন্তরীণ গ্রাহকদের লেনদেনেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমাদের ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজ আছে সপরিবারে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের একাধিক টিম তদন্ত করছে।'

শ্রীকান্ত নন্দীর (৪০) গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। তিনি সপরিবারে কুমিল্লায় থাকতেন এবং সেখান থেকে চাঁদপুরে এসে দায়িত্ব পালন করতেন।

যোগাযোগ করা হলে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক মীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ব্যাংক ম্যানেজার শ্রীকান্ত নন্দীর নিখোঁজ হওয়া এবং এক গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তবে চাঁদপুর বা কুমিল্লায় ওই ম্যানেজারকে বা তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

A captain cannot abandon ship, especially when the sea is turbulent

11h ago