সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনা

‘এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসার?’

সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত রিপন হাওলাদের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। ছবি: স্টার

ঈদে বাড়িতে আনন্দ নিয়ে আসার কথা ছিল রিপন হাওলাদারের (৩৫)। কিন্তু বাড়িতে ফিরেছেন নিথর দেহে।

ঢাকার সদরঘাটে ঈদের দিন বিকেলে লঞ্চ দুর্ঘটনায় যে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন রিপন তাদের একজন।

গতকাল সকাল ১১টায় যখন রিপনের লাশ পটুয়াখালী সদর উপজেলার শিয়ালী গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধ বাবা জয়নাল আবেদিন হাওলাদার ছেলের শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। বাবাকে হারিয়ে চার সন্তানের কান্নায় সেখানে সবার চোখে পানি চলে আসে। তাদের আকুতি এখন কীভাবে চলবে সংসার।

রিপন ঢাকার বাড্ডায় নতুন বাজার এলাকায় থাকতেন। পাঠাওয়ের শেয়ারিং রাইডে মোটরসাইকেল চালাতেন। এর আগে প্রায় ২০ বছর একটি জুস কোম্পানিতে কাজ করলেও এক বছর আগে ছেড়ে দিয়ে শেয়ার রাইডিংয়ে যোগ দেন।

শিয়ালী গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রিপনের সন্তান- রিয়ামনি, রিফাত, বৃষ্টি এবং মেঘলা বাবার জন্য চিৎকার করে কাঁদছেন।

রিপনের ছোট ভাই আল আমিন জানান, ঈদের দিন বিকেলে ভাতিজিকে নিয়ে বাড়ি আসার জন্য বরগুনাগামী তাশীরফ-৪ লঞ্চে ওঠার জন্য ঢাকার সদরঘাটে পন্টুনে দাঁড়ায়। এ সময় অপর একটি লঞ্চের ধাক্কায় তাশরিফ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে গেলে রিপনের মাথায় আঘাত লাগলে সেখানেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্বজনরা জানান, রিপনের আয়েই মূলত চলত তাদের সংসার। একান্নবর্তী পরিবারে তার রয়েছে ৩ মেয়ে এক ছেলেসহ চার সন্তান,  স্ত্রী, ১২ বছর ধরে দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধ বাবা আর তিন ভাই।

রিপনের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, 'রিপন ঢাকায় একাই থাকত। প্রায় ২০ বছর ঢাকায় একটি জুস কোম্পানিতে কাজ করেছে। সেখানকোর বেতনে সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় এক বছর আগে চাকরি ছেড়ে পাঠাও-এ মোটরসাইকেল দিয়ে শেয়ার রাইডিংয়ে যোগ দেয়। তার আয় দিয়েই মূলত ১২ সদস্যের একান্নবর্তী পরিবারটি চলতো। কিন্তু এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসার?'

গতকাল জানাজা শেষে রিপনের মরদেহ পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হয়।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম জানান, পরিবারটিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

IMF sets new loan conditions

Bangladesh must clear dues, hit steep revenue, reserve targets for next tranche

7h ago